হাদীসের মৌলিক জ্ঞান



হাদীসের মৌলিক জ্ঞান-
ভূমিকাঃ ইসলামী জীবন বিধান তত্ত্ব তথ্যগতভাবে দুটো মৌলিক বুনিয়াদের উপর প্রতিষ্ঠিত। একটি হচ্ছে পবিত্র গ্রন্থ আল-কুরআন অপরটি হচ্ছে রাসূল (সাঃ) এর হাদীস পবিত্র কুরআন উপস্থাপন করেছে ইসলামের মূল কাঠামো আর রাসূলের হাদীস সেই কাঠামোর উপর গড়ে তুলেছে একটি পূর্নাঙ্গ ইমারত। তাই ইসলামী শরিয়াতে কুরআনের পরেই হাদীসের স্থান প্রকৃতপক্ষে হাদীস হচ্ছে কুরআনেরই ব্যাখ্যাস্বরুপ এজন্য ইসলামী জীবন বিধানে কুরআনের পাশাপাশি হাদীসের গুরুত্বও অনাস্বীকার্য।
আল্লাহ তায়ালা বলেন- “ওমা আতাকুমুর রাসূল ফাখুযু ওমা নাহাকুম আনহু ফানতাহু”  
 আল-হাশরঃ

এছাড়াও কুরআনের অপর ঘোষনা অনুযায়ী  রাসূল (সঃ)- এর জীবনী হলোউসওয়ায়ে হসানাবা সর্বোত্তম আদর্শ
অন্য আয়াতে বলা হয়েছে-“মাই ইউতিউর রাসূলা ফাকাদ আতায়াল্লাহ” – ‘যে ব্যক্তি রাসূলের আনুগত্য করল বস্তুত সে আল্লাহরই আনুগত্য করল

হাদীসের পরিচয়ঃ
হাদীসের সংজ্ঞাঃ  রাসূল (সা.)-এর কথা, কাজ এবং মৌন সম্মতিকে হাদীস বলে
আছারের সংজ্ঞাঃ   সাহাবীদের কথা কাজকে আছার বলে
হাদীস পরীক্ষা- নিরীক্ষার পদ্ধতি ২টি; যথা-
.রেওয়ায়াত    দেরায়াত
রেওয়ায়াত: রেওয়ায়াত হলো সনদের সাথে সম্পৃক্ত একটি হাদীসের সনদে উল্লেখিত ব্যক্তিবর্গের গ্রহনযোগ্যতা বা অগ্রহনযোগ্যতা পরীক্ষা- নিরীক্ষা করে হাদীসটির স্থান নির্ধারণ করার নামই হলো রেওয়ায়াত পদ্ধতিতে হাদীসের মূল্যায়ন।
*  
দেরায়াত: দেরায়াত অর্থ- অন্তর্দৃষ্টি অভিজ্ঞান। তবে কেবলমাত্র এমন লোকদের দেরায়াত গ্রহণযোগ্য হবে যাঁরা কুরআন,হাদীস ইসলামী ফিকহের অধ্যয়ন চর্চায় নিজেদের উল্লেখযোগ্য অংশ কাটিয়েছেন এবং এর ফলে তাদের মধ্যে অধ্যাবসায় অনুশীলনের এক বিশেষ পর্যায়ের অভিজ্ঞতা প্রজ্ঞার সৃষ্টি হয়েছে এবং যাঁদের জ্ঞান-বুদ্ধিতে ইসলামী চিন্তা কর্ম ব্যবস্থার পরিসীমার বাইরের মতবাদ,মূলনীতি মূল্যবোধ গ্রহণ  করে ইসলামী ঐতিহ্যকে ঐগুলোর মানদন্ডে পরখ করার ঝোঁক প্রবণতা নেই





হাদীসের মৌলিক বিষয় সমূহঃ
*  
সনদঃ হাদীস বর্ণনার ধারাবাহিকতাকে সনদ বলে
*  
মতনঃ হাদীসের মূল অংশকে মতন বলে
*  
রাবীঃ হাদীস বর্ণনাকারীকে রাবী বলে
*  
আদালতঃ সেই সুদৃঢ় শক্তি,যার দ্বারা দ্বীনের উপর অটল অবিচল থেকে খোদাভীরুতা মনুষ্যত্ব অবলম্বন করতে এবং অন্যায় আচরণ থেকে বিরত থাকতে উদ্বুদ্ধ করে
*  
যবতঃ যে শক্তির মাধ্যমে মানুষ শ্রুত বা লিখিত বিষয়কে বিস্মৃতি বিনাশ থেকে সংরক্ষণ করতে পারে এবং যখনই ইচ্ছা করে তখনই হুবহু সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে পারে
*  
মুদাল্লিছঃ গোপন করা হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে যিনি কোন কিছু গোপন করে একটা অস্পষ্টতা অন্ধকারের সৃষ্টি করেন তিনিই হলেন মুদাল্লিছ
*  
ছিকাঃ যে রাবীর মধ্যে ন্যায় পরায়ণতা,স্মৃতি শক্তি,সংরক্ষণ শক্তি  এবং হুবহু প্রকাশ শক্তি বিদ্যমান আছে, তাকে ছিকা রাবী বলে
   
হাদীসের প্রকারভেদঃ
*  
হাদীস প্রধানত দুই প্রকারঃ যথা- . মাকবুল,   . মারদুদ
. মাকবুলঃ হাদীসে মাকবুল রেওয়ায়াতকে বলা হয় যার সনদে হাদীস গ্রহণযোগ্য হওয়ার শর্তাবলী পূর্ণমাত্রায় বিদ্যমান থাকে
. মারদুদঃ যে রেওয়ায়াতে শর্তাবলী পুরো মাত্রায় বিদ্যমান না থাকে তাকে মারদুদ বলা হয়
মাকবুল হাদীস প্রকারঃ . সহীহ   . হাসান এরা প্রত্যেকে আবার ভাগে বিভক্ত সুতরাং মাকবুল হাদীস সর্বমোট ভাগে বিভক্ত।
. সহীহ লি-যাতিহী (সনদ মুত্তাসিল,রাবী আদিল,হাদীসটি শায মুয়াল্লাল নয়)
. হাসান লি-যাতিহী (যার উৎস সর্বজন জ্ঞাত,রাবীগণ সুপ্রসিদ্ধ,যার উপর অধিকাংশ হাদীসের ভিত্তি স্থাপিত,অধিকাংশ আলেম গ্রহণ করে নিয়েছেন,ফকিহগণ দলিল হিসেবে গ্রহণ করে থাকেন)
. সহীহ লি-গাইরিহী (কোন রাবীর মধ্যে যদি স্মরণশক্তির দুর্বলতা থাকে এবং অন্যান্য হাদীসের মাধ্যমে যদি তা দূরিভূত হয়)
. হাসান লি-গাইরিহী (যদি কোন দুর্বল (যইফ) হাদীস বিভিন্ন সনদে বর্ণিত হয়ে বর্জনের স্তর হতে গ্রহনের মর্য়াদা লাভ করে,তবে হাদীসটি যইফ হওয়ার কারণ রাবীর ফিছক বা মিথ্যাচার নয় )


সংজ্ঞা ভিত্তিক হাদীস তিন প্রকারঃ
.ক্বাওলীঃ রাসূল (সঃ)-এর কথাকে ক্বাওলী হাদীস বলে
. ফেলীঃ রাসূল (সঃ) বাস্তব জীবনের কাজকে ফেলী  হাদীস বলে
. তাক্বরিরী রাসূল (সঃ)- এর মৌন সম্মতিকে ত্বাকরিরী হাদীস বলে    


রাবীর সংখ্যার দিক থেকে হাদীস দুই প্রকারঃ
. হাদীসে মুতাওয়াতিরঃ সেই হাদীস প্রত্যেক যুগেই যার বর্ণনাকারীর সংখা এত বেশি যে,তাদের মিথ্যাচারে মতৈক্য হওয়া স্বাভাবিক ভাবেই অসম্ভব
. হাদীসে আহাদঃ হাদীস,যার বর্ণনাকারী মুতাওয়াতির পর্যাযয়ে পৌঁছায়নি
*  
হাদীসে আহাদ আবার তিন প্রকারঃ
. মাশহুরঃ হাদীসের বর্ণনাকারী সাহাবীর পরে কোন যুগেই বর্ণনাকারীর সংখ্যা তিনের কম ছিলনা
. আজীজঃ  যার বর্ণনাকারীর সংখ্যা কোন যুগেই দুই এর কম ছিলনা
. গরীবঃ যার বর্ণনাকারীর সংখ্যা কোন কোন যুগে এক জনে পৌঁছেছে
*  
রাবীদের সিলসিলা বা সনদের দিক থেকে হাদীস তিন প্রকারঃ
. মারফুঃ যে হাদীসের বর্ণনাসূত্র রাসূল (সা.) পর্যন্ত পৌঁছেছে
. মাওকুফঃ যে হাদীসের বর্ণনাসূত্র সাহাবা পর্যন্ত পৌঁছেছে
. মাকতুঃ যে হাদীসের বর্ণনাসূত্র তাবেয়ী পর্যন্ত পৌঁছেছে


রাবী বাদ পড়ার দিক থেকে হাদীস দুই প্রকারঃ
. মুত্তাসিলঃ শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যে হাদীসের রাবী সংখ্যা অুক্ষুন্ন রয়েছে, কখনো কোন রাবী উহ্য থাকে না, এরুপ হাদীসকে মুত্তাসিল হাদীস বলে
. মুনকাতিঃ যে হাদীসের বর্ননাকারীদের ধারাবাহিকতা অুক্ষুন্ন না থেকে মাঝখান থেকে উহ্য রয়েছে এরুপ হাদীসকে হাদীসে মুনকাতি বলে
*   
মুনকাতি হাদীস আবার তিন প্রকারঃ
. মুয়াল্লাকঃ যে হাদীসের সনদের প্রথম থেকে কোন বর্ণনাকারী  উহ্য হয়ে যায় কিংবা গোটা সনদ উহ্য থাকে
. মুদালঃ যে হাদীসে ধারাবাহিকভাবে দুই বা তদোর্ধ বর্ণনাকারী উহ্য থাকে।
. মুরসালঃ যে হাদীসের বর্ণনাসূত্রে তাবেয়ী এবং হুজুর (সা.) এর মাঝখানে সাহাবী রাবীর নাম উহ্য হয়ে যায়
*  
ত্রুটিপূর্ণ বর্ণনার দিক থেকে হাদীস দুই প্রকারঃ
. শাযঃ যে হাদীসের বর্ণনাকারী বিশ্বস্ত কিন্তু তার চেয়ে অধিক বিশ্বস্ত রাবীর বর্ণনার বিপরীত
. মুয়াল্লালঃ যে হাদীসের বর্ননাসূত্রে এমন সূক্ষ ত্রুটি থাকে,যা কেবল হাদীস শাস্ত্রের বিশেষজ্ঞরাই পরখ করতে পারেন
*   
রাবীর গুণ অনুযায়ী হাদীস তিন প্রকারঃ
. সহীহ হাদীসঃ যে হাদীস মুত্তাসিল সনদ (অবিচ্ছিন্ন বর্ণনাসূত্র) বিশিষ্ট, বিশ্বস্ত নির্ভর যোগ্য রাবী,রাবী স্বচ্ছ স্মরণ শক্তি সম্পন্ন এবং হাদীসটি শায মুয়াল্লাল নয়
. হাসানঃ  স্বচ্ছ স্মরণ শক্তি ব্যতীত সহীহ হাদীসের সমস্ত বৈশিষ্ট্যই যার মধ্যে বিদ্যমান।
. জয়ীফঃ যে হাদীসে ছহীহ হাদীছের সকল কিংবা কোন কোনটার উল্লেখযোগ্য একটি থাকে তাকে জয়ীফ হাদীস বলে।
*  
হাদীসে কুদসীঃ হাদীস যার ভাব আল্লাহর পক্ষ থেকে,আর ভাষা মহানবী (সা.)-এর, তাকে হাদীসে কুদসী বলে।
*  
হাদিসে নববীঃ হাদীসে কুদসী ব্যতীত সকল হাদীস
*  
শাইখঃ হাদীসের শিক্ষককে শাইখ বলে
*  
মুহাদ্দিসঃ সনদ মতন সহ হাদীস চর্চাকারী গভীর জ্ঞান সম্পন্ন ব্যক্তি
*  
হাফিজঃ সনদ মতন সহ এক লক্ষ হাদীস আয়ত্বকারী
*  
হুজ্জাতঃ সনদ মতন সহ তিন লক্ষ হাদীস আয়ত্বকারী
*  
হাকিমঃ সনদ মতন সহ সমস্ত হাদীস আয়ত্বকারী
*  
আসমাউল রিজালঃ রাবীদের জীবনী গ্রন্থ


বেশি হাদীস বর্ণনাকারীঃ
পুরুষদের মধ্যে - হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) (৫৩৭৪)
মহিলাদের মধ্যে - হযরত আয়েশা (রাঃ)  (২২১০)
*   সহীহাইনঃ বুখারী মুসলিমকে একত্রে সহীহাইন বলে
*  
মুত্তাফাকুন আলাইহিঃ একই রাবী কতৃক একই হাদীস বুখারী মুসলিম শরীফে যা বর্ণনা করা হয়েছে
*  
সিয়াহসিত্তাহঃ বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ,তিরমিজি,আবুদাউদ,নাসাই ইবনে মাজাহ- এই ছয়খানা বিখ্যাত হাদীস গ্রন্থকে একত্রে সিয়াহসিত্তাহ বলে
*   সুনানে আরবায়াঃ তিরমিজি,আবুদাউদ,নাসাই ইবনে মাজাহ এই চারখানা হাদীসগ্রন্থকে একত্রে সুনানে আরবায়া বলে


সিয়াহসিত্তাহ প্রণেতাঃ (বিশুদ্ধ ৬খানা হাদীস গ্রন্থ)
. বোখারী- আবু আব্দুল্লাহ মু. ইবনে ইসমাঈল বোখারী
. মুসলিম- ইমাম আবুল হুসাইন মুসলিম ইবনুল হাজ্জাজ
. আবু দাউদ- আবু দাউদ সোলাইমান ইবনে আশআস ইবনে ইসহাক আল আসাদী আল সিজিস্থানী।
. ইবনে মাজাহঃ আবু আব্দুল্লাহ মু.ইবনে ইয়াযিদ ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে মাযাহ্
. তিরমিযি - ইমাম মুহাম্মদ আবু ইসা আততিরমিযি
. নাসায়ী - শায়খ আবু আব্দুর রহমান আহমদ ইবনে শোয়াইব আন নাসায়ী


সিয়াহসিত্তাহ বর্ণিত হাদীস সংখ্যাঃ
. বুখারীঃ ৭৩৯৭ টি হাদীস
. মুসলিমঃ ৪০০০ টি হাদীস
. আবু দাউদঃ ৪৩০০ টি হাদীস
. তিরমিজীঃ ৩৮১২ টি হাদীস
. নাসাইঃ ৪৪৮২ টি হাদীস
. ইবনে মাজাহঃ ৪৪৮২ টি হাদীস


জাল হাদীস সংক্রান্ত কথাঃ-
মওদু বা জাল হাদীস হচ্ছে সেই হাদীস যে হাদীসের মধ্যে সনদের বর্ণনাকারীদের সংখ্যা অন্তত কোন এক স্তরে একজন রাবী এমন আছে যাকে মিথ্যাবাদী বলে চিহ্নিত করা যায় রাসূল (সাঃ) যে কথা বলেননি সে কথাকে তাঁর নামে চালিয়ে দেওয়া  মারাত্মক অপরাধমূলক কাজ এর পরকালীন পরিণাম নিশ্চিত জাহান্নাম রাসূল (সাঃ) এরশাদ করেনমান কাজ্জাবা আলাল মুতায়াম্মেদান ফাল এতাবায়য়ায়ূ মাকআদাহু মিনান নার”-‘যে ইচ্ছাকৃতভাবে আমার প্রতি মিথ্যা আরোপ করল সে যেন জাহান্নামে তার বসার স্থানটি খুজেঁ নেয়

 

মওযু বা জাল হাদীসের সূচনা হল যখন যেভাবেঃ-
*  
রাসূল (সঃ)- এর যুগের একটি ঘটনাঃ-
মদীনার এক ব্যাক্তি কোন এক গোত্রের একটি কন্যাকে বিয়ে করতে চাচ্ছিল কিন্তু কন্যা পক্ষ তা প্রত্যাখ্যান করে দেয় হিজরতের পর প্রথম দিকে ব্যাক্তি একটি জুব্বা পরে সেই গোত্রে গিয়ে পৌঁছে এবং কন্যা পক্ষের নিকট গিয়ে বলে রাসূল (সাঃ) নিজে আমাকে এই জুব্বা পরিয়েছেন এবং আমাকে এই গোত্রের প্রশাসক নিয়োগ করেছেন,গোত্রের লোকেরা রাসূল (সাঃ) কে ঘটনাটি অভহিত করে মহানবী (সাঃ) এটা শুনে বলেছেনমিথ্যা বলেছে আল্লাহর এই দুশমন,যাও তাকে যদি জীবন্ত পাও হত্যা কর আর যদি মৃত পাও তার লাশ আগুনে জ্বালিয়ে দাও রাসূলের (সাঃ)-এর পক্ষ থেকে একজন ব্যক্তি সেখানে গিয়ে দেখল সাপের কামড়ে লোকটি মারা গেছে অতএব নির্দেশ অনুযায়ী তার লাশ আগুনে জ্বালিয়ে দেওয়া হল। এরপর মহানবী (সাঃ) সাধারণ্যে ঘোষণা দিলেন- “যে আমার নাম নিয়ে মিথ্যা কথা বলে সে যেন জাহান্নামে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে যায় এই কঠোর সতর্কতামূলক কার্যক্রমের ফলে প্রায় ত্রিশ থেকে চল্লিশ বছর মনগড়া হাদীস ছড়ানোর দ্বিতীয় কোন ঘটনা ঘটেনি
*   জাল হাদীসের সূত্রপাতঃ
হযরত আলী মুয়াবিয়া (রাঃ) এর মধ্যে সংঘটিত দুঃখ জনক ঘটনার ফলে উভয় পক্ষের অতি উৎসাহী ভক্ত অনুসারীদের পরস্পরের প্রতি বাড়াবাড়িমূলক কর্মকান্ডের ফলে জাল হাদীস বা মওদু হাদীসের  উৎপত্তি হয়।
*   
হাদীস জাল করার কারণ উদ্দেশ্যঃ
জিন্দিকগণ পারসিক জিনদের ধর্মাবলম্বী একদল লোক বাহ্যত নিজেদেরকে মুসলমান বলে পরিচয় দিত, কিন্তু প্রচ্চন্ন ভাবে ইসলামের ক্ষতি সাধনের চেষ্টায় থাকত সমস্ত লোকেরা ইসলামের মূলনীতি বিশ্বাসের প্রতি মানুষকে শ্রদ্ধাহীন করার জন্য রাসুলের (সাঃ) নামে অযৌক্তিক হাজার হাজার হাদীস প্রচলন করে তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল ইসলামের অনিষ্ট সাধন
অতি পরহেজগারগণ নিজেদেরকে সূফি প্রমানের লক্ষে জাল হাদীস তৈরি করত
সদুদ্দেশ্যে
তর্কবিতর্কের ক্ষেত্রে রাসূল (সাঃ)- এর শ্রেষ্টত্ব প্রমানের জন্য মনগড়া হাদীস বর্ণনা করে
. যুদ্ধে উত্তেজিত করার জন্য
মুকাল্লিদগণঃ ভিবিন্ন ইমামদের অনুসারীরা নিজেদের ইমামের শ্রেষ্টত্ব প্রমানের জন্য জাল হাদীস রচনা করে
মুসাহেবগণঃ রাজা-বাদশা আমীর উমরাহদের মুসাহেবগণ নিজেদের প্রভুকে খুশি করার জন্য জাল হাদীস বর্ণনা করত
বক্তাগণ
অসতর্কতা অন্ধভক্তি
১০সুফিগণ
*   কয়েকটি মাওযু হাদীসঃ
. আমার উম্মতের আলিমগণ বনি ইসরাইলের নবীগনের সমতুল্য,
. আলিমগনের/জ্ঞানীর কলমের কালি শহীদের রক্তের চেয়েও উত্তম
. স্বদেশপ্রেম ঈমানের অঙ্গ,
. কলব (অন্তর) হচ্ছে রবের ঘর,
. সুদূর চীন দেশে গিয়ে হলেও জ্ঞান অর্জন কর,
. পাগড়ী পড়া রাকাত নামাজে ২৫ রাকাতের সওয়াব - ইত্যাদি
*  জাল হাদীসের লক্ষণঃ
স্বীকারোক্তি
যে সকল হাদীসের প্রত্যক্ষ শর্তের বিপরীত কোন কিছু বর্ণিত হয় তা জাল হাদীস যেমন বেগুন সকল রোগের ঔষধ
জীবনে একবারও হাদীস জাল করেছে বা জেনে শুনে জাল হাদীস প্রচার করেছে এমন ব্যাক্তির বর্ণিত হাদীস
যে হাদীসের বর্ণনা মূলের বিপরীত যেমন- সূর্য তাপে তক্ত জ্বলে,স্নান করলে কুষ্ঠ রোগ হয়
খাজা-খিজির সম্মন্ধে বর্ণিত সকল হাদীস
যে হাদীসে কোন জঘন্য ভাবের সমাবেশ আছে
. যে হাদীসের ভাষা অশোভনীয়
যে হাদীসে এমন ঘটনা উল্লেখ আছে যে,তা ঘটে থাকলে বহুলোক জানার কথা ছিল,অথচ মাত্র একজন রাবী তা বর্ণনা করেছে
যে হাদীসে অনর্থক মুল্যহীন কথা আছে
১০যা কুরআন,সহীহ হাদীস কাতয়ী ইজমার বিপরীত
১১যে সকল হাদীসে সামান্য কাজের জন্য বড় বড় সওয়াব এবং সামান্য অপরাধের জন্য কঠোর দন্ডের ওয়াদা করা হয়েছে
*  
যাদের হাদীস গ্রহণ করা যাবেনাঃ-
রাসূল (সাঃ)-এর  প্রতি মিথ্যা আরোপকারী
সাধারণ কথা বার্তায় যারা মিথ্যা কথা বলে
বিদয়াতী প্রবৃত্তির অনুসারী
. জিন্দিক,পারসিক,অমনোযোগী অসতর্ক ব্যাক্তিবর্গ এবং যাদের মধ্যে আদালত,যাত ফাহাম (ন্যায় পরায়ণতা, বুদ্ধিমত্তা)  ইত্যাদি গুণাবলীর অনুপস্থিতি থাকবে
*  
হাদীস জালকারীদের কয়েকজন/মুহাদ্দিসগনের নিকট মিথ্যাবাদি হিসেবে আধিক পরিচিত যারাঃ
. আবান্ যাফার আন-নুমাইরীঃ এই ব্যক্তি ইমাম আবু হানিফা (রহঃ)-এর নামে তিন শতাধিক হাদীস ছড়িয়েছেন
. ইবরাহীম ইবনে যায়িদ আল-আসলামীঃ ব্যক্তি ইমাম মালিক (রহঃ)-এর নামে বহু হাদীস ছড়িয়েছেন
. আহমদ ইবনে আবদিল্লাহ -জুওয়ায়বারীঃ সে সিয়াদের কাররামিয়া সম্প্রদায়ের নামে হজার হাজার হাদীস বর্ণনা করে
. জাবির ইবনে ইয়াজিদ আল-যুফিঃ তার সম্পর্কে সুফিয়ান বলেন,আমি জাবিরকে বলতে শুনেছি সে প্রায় ত্রিশ হাজার জাল হাদীস বর্ণনা করেছে
. মহাম্মদ ইবনে সুজা আছ-ছালজীঃ সে সৃষ্ট বস্তুর সাথে আল্লাহর সম্পর্ক সাদৃশ্যমূলক বিষয়ে বহু হাদীস তৈরী করে মহাদ্দীসদের নামে ছড়িয়েছে
. নুহ ইবনে আবি মারিয়ামঃ সে কুরআনের নানাবিধ ফজীলত বিভিন্ন সূরার সাহাত্ম্য মর্যাদা বিষয়ক বহু হাদীস তৈরী করে ছড়িয়েছে
*    ইমাম আন-নাসাই (রহঃ) বলেন- জাল হাদীস রচনার সাথে জড়িত মিথ্যাবাদী হিসেবে প্রসিদ্ধি লাভকারী ব্যক্তি চারজনঃ
. মদীনায় ইবনে আবি ইয়াহইয়া
. বাগদাদে আল-ওয়াকিদী
. খুরাসানে মুকাতিল
. শামে মুহাম্মদ ইবনে সাইদ আল-মাসলুব













Share this :

Previous
Next Post »