কুরআন সংকলনের ইতিহাস



কুরআন সংকলনের ইতিহাস
রাসুর (সাঃ) এর জীবদ্দশায় কুরআন তিন ভাবে সংরক্ষিত হত
) বিত্বাহফীজ হিফজ ওমুখস্থ করার মাধ্যমে অন্তরে সংরক্ষিত হয়
) বিল কিতাবাতি ওয়াহী লেখকগণের দ্বারা সংরক্ষিত হয়
) বিল আমলিঃ আমলের মাধ্যমে কুরআন কে সংরক্ষন করা
কুরআন সংকলন সংরক্ষনের মোট ৩টি অধ্যায় /যুগ রয়েছে

  • প্রথমত রাসূল সাঃ জীবদ্দশায়ঃ
রাসূল (সাঃ) জীবদ্দশায় কুরআন লিখিত ভাবে সংরক্ষিত হয়
কুরআনের কোন সূরা বা আয়াত যখনই নাযিল হত তখনই নবী করিম সাঃ কাতেবে ওয়াহী দেরকে লিখেক নিতে বলতেন তারা পাথর , খেজুর পাতা, চামড়াইত্যাদিতে লিথে রাখতেন এমনকি তিনি নাযিল কৃত অংশটুকুর স্থানও নিধারর্ণ করে দিয়ে বলে দিতেন , এই সূরা বা আয়াতটি অমুক সূরার আগে বা  পরে স্থান পাবে এভাবে তিনি নিজেই প্রত্যেক টা সূরাবা আয়াতের স্থান নির্ধারণকরে দিতেন। সাহাবাগণ এই তারতীব অনুযায়ী কুরআন মুখস্থ করে নিতেন। বস্তত কুরআন নাযিল সম্পন্ন হবার পর দিনই কুরআনের তারতীব বা পরম্পরা নির্ধারণ সম্পন্ন হয় এককথায় যার উপর কুরআন নাযিল করা হয় তাকে দিয়েই মহান আল্লাহ কুরআনের তারতীব নির্ধারণ করার ব্যবস্থা করেন

  • দ্বিতীয়তঃ হযরত আবু বকরের রাঃ এর যুগঃ
আমলে রাসুল (সাঃ) কর্তৃক তারতীব অনুযায়ী নিখুত নির্ভুল পন্থায় পূর্ণাঙ্গ কুরআন একত্রিত করে সুগ্রথিত গ্রন্থাবদ্ধ করা হয়ঃ   হযরত আবু বকরের খেলাফতকালে একাদ্বশ হিজরীতে ভন্ডনবী মুসাইলামাতুল কাযযাবের বিরুদ্ধে ইয়মামার যুদ্ধে এক রক্তক্ষয়ী  সংঘর্ষে ৭০ জন হাফেজুল কুরআন শাহাদতবরন করেন। এতে হযরত উমর (রাঃ) বিচলিত হয়ে হযরত আবু বকর (রাঃ) কে সমস্ত কুরআন মাসহাফে একত্রিত করার পরামর্শ দেন। হযরত ওমরের (রাঃ) পরামর্শক্রমে হযরত আবু বকর (রাঃ) হযরত যায়েদ বিন সাবিতকে  প্রধান করে কুরআন সংকলনের জন্য একটি কমিটি গঠন করলেন
হযরত যায়েদ বিন সাবিতের নেতৃত্বে এই কমিটি কুরআনকে কাগজে, চামড়ায়, পাতায় পাথরে সংরক্ষিত অংশ সংগ্রহ করে হাফেজে কুরআনদের সাথে মিলিয়ে সুবিন্যাস্ত করে কুরআন সংকলনের একটি পান্ডুলিপি তৈরি করে খলিফার নিকট সোপর্দ করা হয়। ইহামাসহাফে সিদ্দিকীনামে পরিচিত। হযরত আবু বকর (রাঃ) এর ইন্তিকালের পর হযরত ওমরের (রাঃ) সময় এটি হযরত হাফসা (রাঃ) নিকট সংরক্ষিত ছিল। (ইহা ইমাম বুখারী () বর্ণনা করেন)

  • তৃতীয়তঃ হযরত উসমান (রাঃ) যুগে সংকলনঃ
হযরত ওমর (রাঃ) এর সময় মুসলমানেরা অসংখ্য রাজ্য দখল করে। প্রতিটি রাজ্যের আলাদা আলাদা ভাষা ছিল। বিভিন্ন রাজ্যের লোকেরা কুরআনকে বিভিন্ন ভাষায় তেলাওয়াত করতে লাগল এবং এত কুরআনের আয়াত অর্থের অনেক তারতম্য সৃষ্টি হল। হযরত ওমরের (রাঃ) ইস্তিকালের পর হযরত উসমান (রাঃ) খলিফা নির্বাচিত হন। তিনি বিষয়টি বুঝতে পেরে হযরত হাফসা (রাঃ) এর নিকট থেকে সংরক্ষিত কপিটি সংগ্রহ করে হযরত যায়িদ বিন সাবিত (রাঃ) কে রাসূলের (সাঃ) ভাষায় অনেক গুলি কপি করে প্রত্যেক প্রদেশে একটি করে কপি পাঠিয়ে দেন এবং পূর্বের সকল কপিগুলো সংগ্রহ করে পুড়িয়ে ফেলেন। তার দায়িত্বে যেহেতু কুরআন সংকলিত হয়েছে তাই তাকে জমিউল কুরআন বলা হয়। আজও পর্যন্ত এই কপি প্রচলিত আছে
তিলাওয়াত সহজ করনঃ
হজরত উসমান (রাঃ) কতৃক গৃহীত উদ্যোগের ফলে কুরআন সংরক্ষনের নিশ্চয়তা সুষ্টি হলেও কোন কোন স্থানে আর একটি নতুন সমস্যার উদ্ভব ঘটে তা হলো ভাষার ভিন্নতার কারনে তেলাওয়াতে সমস্যা দেখা দিল এই সমস্যা সমাধানকল্পে উসমানী অনুলিপির মূল ঠিক রেখে পর্যায়ক্রমে নিন্মোক্ত পক্রিয়া অবলম্ভন করা হয়। যেমনঃ
.নোকতাঃ
সর্বপ্রথম নোকতার প্রচলন কে করেছিলেন তা নিয়ে মতোবিরোধ রয়েছে কোন কোন বর্ননামতে হযরত আলী (রাঃ) নির্দেশে বিশিষ্ট তাবই হযরত আবুল আসওয়াদ আদ-দুয়াইলি (রঃ) আন্জাম দেন
কারো কারো মতে কুফার শাসনকর্তা যিয়াদ ইবনে সুফিয়ান আবুল আসওয়াদকে দিয়ে কাজ করিয়েছিলেন
অন্য এক বর্ননা অনুযায়ী  হাজ্জাজ বিন ইউসুফ- হযরত হাসান বসরি (রঃ),হযরত ইয়াহইয়া ইবনে ইয়ামার () হযরত নসর ইবনে আসেম লাইছি () এর দ্বারা একাজ করিয়েছিলেন
. হরকতঃ
. হামজা তাশদিদঃ
নোকতা হরকতের কিছুকাল পর খলিল ইবনে আহমদ(.) হামজা তাশদিদের চিহ্ন তৈরী করেন
.মানযিলঃ
সাহাবায়ে কিরামরা (রাঃ) প্রতি সাপ্তাহে একবার কুরআন শরীফ তেলাওয়াত করতেন, এজন্য প্রতিদিনের জন্য কুরআনকে ভাগকরে নিয়েছিলেন সাহাবায়ে কেরামদের এই সাত ভাগই সাতটি মনজিল হিসেবে পরিচিত
.ত্রিশ পারাঃ
অনেকের ধারনা হয়রত উসমান (রাঃ) কতৃক কুরআন সংকলনের সময়ই এইভাবে ত্রিশ ভাগে বিভক্ত করা হয়েছিল। এছাড়া আর বিশেষ কোন বিবরন পাওয়া যায়নি
আল-কুরআনের মুদ্রনঃ
  •          পৃথিবীতে মুদ্রন যন্ত্র আবিস্কারের পূর্বে আল-কুরআন হাতেই লিখা হতো। কুরআনের হস্তলিপিকারগন যে অনন্য সাধনার স্বাক্ষর রেখে গেছেন, ইতিহাসে এর অন্য কোন নযির নেই
  •          মুদ্রন যন্ত্র আবিস্কারের পর সর্বপ্রথম জার্মানির হামবুর্গ শহরে হিজরী ১১১৩ সনে আল-কুরআন মুদ্রিত হয়। মুদ্রিত সেই আল-কুরআনের একটি কপি মিশরের দারুল কুতুবে এখনো সংরক্ষিত আছে। কিন্তু মুসলিম জাহানে সে সমস্ত মুদ্রিত কপি গ্রহনযোগ্য বিবেচিত হয়নি
  •          মুসলিমদের মধ্যে সর্বপ্রথম মাওলায়ে উসমান কতৃক রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গ শহরে ১৭৮৭ খৃষ্টাব্দে আল-কুরআন মুদ্রিত হয়। ১৮২৮ খৃষ্টাব্দে ইরানের তেহরানে লিথু মুদ্রনযন্ত্রে আল-কুরআনের আর একটি কপিমুদ্রিত হয়। এরপর সারা দুনিয়ায় মুদ্রিত কুরআন ছড়িয়ে পড়ে

Share this :

Previous
Next Post »