যাকাত কাকে দেওয়া যাবে এবং কাকে দেওয়া যাবে নাঃ



নিম্ন লিখিত আট খাতে যাকাতের অর্থ ব্যয় করা ফরজ আল্লাহ্পাক কোরআনে বলেনঃ

যাকাত কেবল ফকির মিসকিন তৎসংশ্লিষ্ঠ কর্মচারীদের জন্য, যাদের চিত্ত আকর্ষন করা উদ্দেশ্য তাদের জন্য, দাস মুক্তির জন্য, ঋনে জর্জরিত ব্যাক্তিদের জন্য, আল্লাহর পথে সংগ্রামকারী এবং মুসাফিরদের জন্য এটা আল্লাহর নির্ধারিত বিধান এবং আল্লাহ সর্বজ্ঞ প্রজ্ঞাময় তওবাঃ ৬০

০১ ফকিরঃ
যে ব্যক্তি মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে ভিা চায়, যারা সর্বদা অভাব অনটনে জীবন কাটায়, নিজ জীবিকার জন্য অন্যের মুখাপেী এরাই ফকির

০২ মিসকীনঃ
একজন দরিদ্র ভদ্রলোককে বুঝায়, যার বাহ্যিক অবস্থা দেখেও অভাবগ্রস্থ মনে হয় না, স্বীয় আতœসম্মান বোধের জন্য অপরের নিকট সাহায্য চাইতে পারেনা অথচ কঠোর শ্রম প্রানান্তর চেষ্টার পরও সংসারের অন্ন, বস্ত্র বাসস্থানের ব্যবস্থা করতে পারেনা সমাজে তথা নিজ আতœীয় স্বজনদের মধ্যে এরকম কেহ থাকলে তারাই হকদার বেশী

০৩ যাকাত আদায়কারী কর্মচারীঃ
সরকারী ভাবে নিযুক্ত যাকাত আদায় বিতরনের কর্মচারী বর্তমানে এই খাত বাংলাদেশে প্রযোজ্য নয়

০৪ মন জয় করার জন্য নওমুসলিমঃ
যাদের অন্তর ইসলামের প্রতি আকৃষ্ঠ তবে সামাজিক বা আর্থিক ভয়ে ইসলাম ধর্মে আসছে না তাদের সাহায্য করে প্রকাশ্যে দলভুক্তি করা অথবা যারা নও মসলিম হয়েছে অন্য ধর্ম ছাড়ার কারনে পারিবারিক সামাজিক আর্থিক ভাবে বঞ্চিত হয়েছে তাদের সাহায্য করে ইসলামে সুদৃঢ় করা

০৫ ঋনমুক্তির জন্যঃ
জীবনের মৌলিক চাহিদা পুরনের জন্য সংগত কারনে ঋনগ্রস্থ ব্যক্তিদের ঋনমুক্তির জন্য যাকাত প্রদান করা যায়

০৬ দাসমুক্তিঃ  
কৃতদাসকে মুক্তির জন্য প্রথা এখন প্রযোজ্য নয়

০৭ ফি সাবিলিল্লাহ বা আল্লাহ্র পথেঃ
সাবিলিল্লাহ শব্দের অর্থ ব্যাপক যে সব কাজ দ্বারা আল্লাহ্র সন্তোষ নৈকট্য লাভ করা যায় তাকেই ফি-সাবিলিল্লাহ্ বুঝায় অন্যকথায় মুসলিম জনগণের কল্যানকর যাবতীয় কাজ যার ফলে দ্বীন রাষ্ট্রের স্থিতি আসে এমন কাজ

০৮ মুসাফির/প্রবাসীঃ
পথে বা প্রবাসে মুসাফির অবস্থায় কোন ব্যক্তি বিশেষ কারনে অভাব গ্রস্থ হলে ব্যক্তির বাড়ীতে যতই ধন-সম্পদ থাকুক না কেন তাকে যাকাত প্রদান করা যাবে



যাকাত কাকে দেওয়া যাবে নাঃ
 
) নিসাব পরিমান মালের অধিকারী বা ধনীকে যাকাত দেওয়া যাবে না (মুসাফির ব্যতিত)
) সম্পদশালীর নাবালক পুত্র-কন্যাকে যাকাত দেওয়া যাবে না
) কুরাইশ গোত্রের বনু-হাশিম এর অন্তর্গত আব্বাস, জাফর, আকীল (রাঃ) এর বংশধরের জন্য যাকাত গ্রহন বৈধ নয়
) অমুসলিম ব্যক্তিকে যাকাত দেওয়া যাবে না
) যে সব প্রতিষ্ঠানে ধনী-গরীব সবাই সেবা পায় সেখানে যাকাত দেওয়া যাবে নাযেমনঃ মসজিদ, মাদ্রাসা (এতিম ফান্ড বা লিল্লাহ বোডিং ব্যতিত), শিাপ্রতিষ্ঠান, আশ্রয়কেন্দ্র, সেতু, টিউবয়েল, কুপ, পুকুর,রাস্তাঘাট ইত্যাদি
) দরিদ্র পিতামাতা, সন্তান,দাদা,নানা,স্বামী বা স্ত্রীকে যাকাত দেওয়া যাবে না
) প্রতিষ্ঠানের বেতনভুক্ত কর্মচারী প্রতিষ্ঠানের পে এতিমখানা/লিল্লাহ বোডিং এর জন্য
যাকাত আদায় কারী নিযুক্ত হলে তাকে ব্যক্তিগত ভাবে কিছু হাদিয়া/উপঢৌকন হিসাবে
দেওয়া যাবেনা
) উপার্জনম ব্যক্তি যদি উপার্জন ছেড়ে দিয়ে নামাজ-রোযা ইত্যাদি নফল ইবাদতে
মশগুল হয়ে যায় তাকে যাকাত দেওয়া যাবে না
) উপার্জনম অলস ব্যক্তিকে যাকাত দেওয়া যাবে না
১০) নিজ চাকর চাকরানীকে যাকাতের টাকায় বেতন-ভাতা দেওয়া যাবেনা

২১ যাকাত একজনকে কতটুকু দেওয়া যাবেঃ
হানাফী মাজহাবে পর্যাপ্ত পরিমান যাকাত প্রদান বৈধ সাধারনত দুশো দিরহামের বেশী বা নিসাব পরিমানের বেশি দেওয়া মাকরূহ্ তবে পারিবারিক প্রয়োজন বা ঋনগ্রস্থদের জন্য অথবা নিজ আতœীয়দের সচ্ছল করার জন্য ইহার কোন নির্ধারিত পরিমান নাই হযরত উমর (রাঃ) বলেন, যখন দাও সচ্ছল বানিয়ে দাও ইমাম মুহাম্মাদ (রাঃ) বলেন, যাকাত দিয়ে কোন ব্যক্তিকে সচ্ছল বানিয়ে দেওয়া আমার কাছে অধিক পছন্দনীয়

২২ যাকাত বন্টনের এলাকাঃ
এলাকার যাকাত এলাকেতেই প্রদান মসনুন যেমনঃ ভাই, বোন, চাচা,মামা,ফুপু,খালা,শ্বশুর এবং তাদের šতানগণ, নিজ জামাতা,বিমাতা ইত্যাদি হক দার যদি থাকে তা আদায়াšেতর পর নিজ চাকর-চাকরানী,প্রতিবেশী, মহল্লাবাসী, গ্রামবাসী, পরিচিত এলাকার দরিদ্র আলেম, এলমেদ্বীন শিার্থী, মাদ্রাসার লিল্লাহ বোডিং ইত্যাদি খাতে বন্টনের পর দেশের সার্বিক কল্যানের স্বার্থে অন্যত্র বন্টন করা যাবে

২৩ বর্তমান প্রোপটে যাকাত প্রস্তাবনা
পবিত্র কোরআনের উল্লেখিত ৮টি খাতের মধ্যে ৬টি খাতই বিভিন্নভাবে দারিদ্রের সাথে সম্পৃক্ত ইসলামী চিন্তাবিদগন ঐক্যমত পোষন করেন যে সরকারী ভাবে আইনের মাধ্যমে যাকাত আদায় প্রদানের ব্যবস্থা না থাকায় ব্যক্তিগত উদ্যোগে নিম্ন লিখিত খাতে যাকাত আদায় বিতরনের ব্যবস্থা করা যেতে পারে বর্তমান পোপট বিবেচনা করে এদেশের সকল সচেতন মুসলিম ভাই-বোনদের ব্যপারে এগিয়ে এসে খোদাপ্রদত্ব অর্থনীতি চালু করে সমাজে কোরআনের আইন সূন্নাহর সুফল বয়ে আনতে হবে

(
) স্থায়ী বা দীর্ঘমেয়াদী প্র¯তাবঃ
দেশের যে সব এলাকায় বিভিন্ন নামের সেবা প্রতিষ্ঠান বা মিশনারী সামাজিক উন্নয়নের কথা বলে সাধারন জনগনকে বিধর্মীয় সং®কৃতি, বেদায়েতী প্রথা চালু, বিতর্কিত ধর্মীয় প্রথা প্রচলন তথা ইসলামকে হীন করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত সে সব এলাকায় বিশেষ প্রোগ্রাম চালু করে কোমলমতি জনগনকে ইসলামের প্রকৃত আর্থিক সামাজিক সুফল প্রতিষ্ঠা করা একান্ত জরুরী
০১) চিহ্নিত গরীব, মিসকিন, দুঃখী, দুস্থ, রুগ্ন,অম, পঙ্গু, বৃদ্ধ, ইয়াতিমদের জন্য নিয়মিত ভাতার ব্যবস্থা করা
০২) ইসলামের প্রচার, প্রসার প্রতিষ্ঠার জন্য এমনস্থায়ী প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা
যাতে সমাজে ইসলামের ভিত মজবুত হয় জন্য গবেষনা, প্রকাশনা প্রশিনের
উন্নততর ব্যবস্থা নেওয়া
০৩) দরিদ্র, মেধাবী ছাত্র/ছাত্রীদের জন্য স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা সহ সকল শিা প্রতিষ্ঠানে
যাকাত ফান্ড থেকে নিয়মিত ষ্টাইপেন্ড, স্কলারশীপ বা বিনা মূল্যে শিার ব্যবস্থা করা
০৪) নিজ নিজ এলাকায় বয়স্ক ধর্মীয় এবং সাধারন শিার ব্যবস্থা চালু করা
০৫) স্বাস্থ্য সেবার জন্য স্থানীয় কিনিক, হাসপাতাল, ডিসপেনসারী প্রভৃতিতে যাকাত ফান্ডের
টাকায় চিকিৎসার ব্যবস্থা করা

(
) পরিবার উন্নয়ন প্র¯তাবঃ
যাকাত প্রধানত ব্যক্তি বা পরিবারের দুরাবস্থা দুরীভুত করার জন্যই ব্যয়িত হতে পারে
০১) শিতি, অশিতি, বেকার পুরুষ/মহিলা সকলকে কর্মসংস্থানের জন্য ট্রেনিং তথা
কর্মের মূলধন দিয়ে যোগ্যতা অনুযায়ী কর্ম সংস্থানের ব্যবস্থা করা
০২) ঋনগ্রস্থদের ঋন পরিশোধের ব্যবস্থার সাথে সাথে প্রয়োজনীয় পরামর্শ তদারকি
প্রদান করা যেন আবার ঋন গ্রস্থ হয়ে না পরেন
০৩) প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বন্যা, ঘূর্নিঝড়, জলোচ্ছাস, ভুমিকম্প, ইত্যাদিতে তিগ্রস্থদের
সাহায্যের জন্য যাকাত তহবিল সংরতি করা
০৪) কন্যাদায় গ্রস্থ বা বিধবাদের সহযোগীতার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া
০৫) দাসমুক্তি প্রথা না থাকলেও বর্তমানে অনেক মুসলমান কারাবন্দি আইনের অপপ্রয়োগ
বা জটিলতার কারনে বিচারে বা বিনা বিচারে কারাগারে মানবেতর জীবন যাপন
করছেন এদের মানষিক উন্নয়ন, ধমীয়শিা পারিবারিক সাহায্যের ব্যবস্থা করা

যেতে পারে




যাকাত সম্পর্কে আরো জানতে এখানে ক্লিক করুন।

Share this :

Previous
Next Post »