ইসলামে যাকাত বিধানঃ

Islamic World
আসসলামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুলাহ,
যাকাত ঈমানী আর্থিক ফরজ ইবাদত মুসলিম হিসাবে যাকাত কি, যাকাত কোন মালের দিব, যাকাত কত দিব, যাকাত কাকে দিব ইত্যাদি সম্মন্ধে সম্যক জ্ঞান যাকাত দাতা এবং যাকাত গ্রহিতা উভয়েরই থাকা বাঞ্চনীয় কিন্তু পরিতাপের বিষয় সে জ্ঞান আমাদের নাই সহজ সংক্ষেপে যাকাত সংক্রান্ত সম্যক জ্ঞানের লক্ষে এর বাংলা ইসলামের যাকাত বিধান থেকে যাকাত নির্দেশিকাটি সংকলিত করা হলো ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা যাকাত আদায়ে সামান্য সহায়ক হলে নিজেকে সার্থক মনে করবো

নির্দেশিকাটির কোন ভুল ত্রুটি পরিলতি হলে দয়া করে নিম্ন ঠিকানায় জানিয়ে বাধিত করবেন ইহার ফটোকপি, পুনঃমুদ্রন বা যে কোন ধরনের প্রচারে বাধ্যবাধকতা নাই, তবেকেহ স্বতস্ফুর্ত মূদ্রন বা প্রচার করলে তাকে স্বাগত জানানো হবে আল্লাহ্পাক আমাদের তাঁর নির্দেশিত এবং রাসূলেপাক (সাঃ) এর প্রদর্শিত পথে, ইসলামী জীবন যাপনে তৌফিকদান করুন- আমিন

০১ যাকাতের সংজ্ঞাঃ
কোন মুসলমান ব্যক্তি কর্তৃক আল্লাহ্র সন্তুুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে তার নিসাব পরিমান মাল বা সম্পদের পূর্ন এক চন্দ্র বছর ভোগ দখলের পর নির্দিষ্ট অংশ নির্ধারিত খাতে ব্যয় করাকে যাকাত বলে

০২ আল-কোরআন মজীদে যাকাতঃ
যাকাত প্রদান আল্লাহ্র হুকুম পবিত্র কোরআনে আল্লাহ্ তায়ালা এর বিধান, আদেশ, রহমত, অধিকার, প্রাপক ইত্যাদির উল্লেখ করেছেন নিম্নে কয়েকটি আয়াত উল্ল্যেখ করা হলোঃ

বিধানঃ এবং সালাত কায়েম করবে আর যাকাত প্রদান করবে, এই হচেছ দীনের মজবুত
বিধান বাইয়্যেনাহঃ
আদেশঃ তোমরা নামাজ কায়েম কর এবং যাকাত দাও বাকারাহঃ ৪৩ ১১০ (অংশ)
রহমত সালাত কায়েম কর, যাকাত আদায় কর, রাসূলের আনুগত্য কর, যাতে করে
তোমরা আল্লাহ্র রহমত পেতে পার নূরঃ ৫৬
অধিকারঃ ()ধনীদের সম্পদে প্রার্থী বঞ্চিতদের অধিকার রয়েছে আয-যারিয়াত-১৯
(
)তাদের ধন-সম্পদে সুনির্দিষ্ট অধিকার আছে ভিখারী বঞ্চিতদের জন্য
আল-মাআরিজঃ ২৪ ২৫
(
) অতএব আত্বীয়কে দাও তাদের প্রাপ্য (হক) এবং অভাব গ্র¯ মুসাফিরকেও যারা আল্লাহ্র সন্তুষ্টি কামনা করে তাদের জন্য এটা শ্রেয় রোমঃ ৩৮
প্রাপকঃ যাকাত কেবল ফকির মিসকিন তৎসংশ্লিষ্ঠ কর্মচারীদের জন্য, যাদের চিত্ত আকর্ষন করা উদ্দেশ্য তাদের জন্য, দাস মুক্তির জন্য, ঋনে জর্জরিত ব্যক্তিদের জন্য, আল্লাহর পথে সংগ্রামকারী এবং মুসাফিরদের জন্য এটা আল্লাহর নির্ধারিত বিধান এবং আল্লাহ সর্বজ্ঞ প্রজ্ঞাময় তওবাঃ ৬০
পবিত্রতাঃ তাদের সম্পদ থেকে সাদাকা (যাকাত ) গ্রহন করুন এর দ্বারা আপনি তাদেরকে পবিত্র , করবেন এবং পরিশোধিত করবেন তওবাঃ ১০৩
ধন সম্পদ বৃদ্ধিঃ আল্লাহর সন্তষ্টি লাভের জন্য যে যাকাত তোমরা দিয়ে থাকো তাহাই
বৃদ্ধি পায় এবং উহাই সমৃদ্ধশালী রোমঃ ৩৯ (অংশ )
ধন সম্পদ ধ্বংস দুর্ভোগ (ধংস ) অনিবার্য সকল মুশরিকদের জন্য যারা যাকাত আদায় করে না এবং আখিরাতেও অবিশ্বাসী হামিমঃ ( অংশ )
হুশিয়ারঃ আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে যা তাদেরকে দিয়েছেন তাতে যারা কৃপনতা করে, তাদের জন্য তা মঙ্গল যেন তারা কিছুতেই মনে না করে আল-ইমরানঃ ১৮০

উশর বা ফসলের যাকাতঃ
(
) হে ঈমানদারগন উপার্জিত সম্পদের উত্তম অংশ আল্লাহ্র পথে খরচ কর এবং তা
থেকেও খরচ কর যা আমি তোমাদের জন্য ভূমি থেকে উৎপন্ন করেছি
বাকারাহঃ ২৬৭ ( অংশ )

(
) বৃ যখন ফলবান হয় তখন এর ফল ভন কর এবং এর ফসল তোলার দিনে যে
বঞ্চিত তার হক আদায় কর এবং কখনো অপচয় করো না
আল-আনআমঃ ১৪১ (অংশ )

০৩ হাদীস শরীফ অন্যান্য গ্রন্থে যাকাতঃ
(
) আব্দুল্লাহ ইবন মাসুউদ (রাঃ) বলেন আল-কোরআন হাদীস দ্বারা প্রমানিত যে,যাকাত
ব্যবস্থা ইসলামের তৃতীয় স্তম্ভ তথা সুষ্পষ্ট ফরজ যে ব্যক্তি ইহা অস্বীকার করবে বা
যথাযথভাবে আদায় করবে না নিশ্চিত ভাবে সে কাফির এবং ইসলাম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে
যাবে (আল-মাজমু ইবন কুদামা-যাকাত-আবুল হাসান আল নাদভী )
(
) যে যাকাত আদায় করে না তার কোন সালাত কবুল হয়না তাফসীরে তাবারী
(
) কেউ যদি আল্লাহর পূরস্কারের আশায় যাকাত দেয় তাহলে তাকে পুরস্কৃত করা
হবেকিন্তু যে যাকাত দিতে অস্বীকার করবে তার কাছ থেকে শক্তি প্রয়োগ করে যাকাত
আদায় করতে হবে এবং আল্লাহর হুকুম অনুযায়ী তার অর্ধেক সম্পত্তিও নিয়ে নেওয়া
হবে বুখারী- নাসাঈ, বায়হাকী
(
) স্থল জল ভাগে যে ধন-সস্পদ নষ্ট হয় তা শুধু যাকাত বন্ধ করার দরুনবাজ্জার,
বায়হাকী,তাবরানী
(
) যাকাত যে মালের সাথে মিশ্রিত হয় সে মালকে যাকাত অবশ্যই ধ্বংশ করে দেয়
বাজ্জার,বায়হাকী
(
) আমি আদিষ্ট হয়েছি জন্য যে, আমি যুদ্ধ করব লোকদের সাথে যতন না তারা
স্যা দেবে যে আল্লাহ ছাড়া কেহ ইলাহ নেই, মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসুল,নামাজ কায়েম
করবে যাকাত দিবে : বুখারী,মুসলিম

০৪ পূর্ববতী নবী-রাসূলের যুগে যাকাতঃ
দীন ইসলাম মানবজাতির জন্য আল্লাহ্ প্রদত্ত পরিপূর্ন ভারসাম্যমূলক জীবন ব্যবস্থা ভারসাম্য রার জন্য যাকাতের গুরুত্ব ব্যাপক ইসলামের পাঁচটি মৌলিক ইবাদতের মধ্যে যাকাতকে তৃতীয় বলে ঘোষনা করা হয়েছে দীনের সকল মৌলিক নীতি সব যুগেই এক অভিন্ন দীনের সূচনাতে হযরত আদম (আঃ) এর সময় শরীয়াহ বিধান ছিলনা হযরত নূহ (আঃ) থেকে শরীয়াহ প্রবর্তন হয় বিভিন্ন নবী রাসূলগনের যুগে শরীয়াহ বিধান ভিন্ন ভিন্ন থাকলেও সালাত যাকাতে কোন ভিন্নতা ছিল না কারনেই পবিত্র কোরআনে হযরত ইব্রাহিম (আঃ), হযরত ইসহাক (আঃ), হযরত ইয়াকুব (আঃ), হযরত ইসমাইল (আঃ), হযরত ঈসা (আঃ) এর নাম যাকাত সংক্রান্ত বিভিন্ন আয়াতে ল্য করা যায় অর্থাৎ পূর্ববতী অনেক নবী রাসূলের যুগেও যাকাত বিধান ছিল

যাকাতের নিয়ৎঃ
) যাকাত পরিশোধে অবশ্যই সংকল্প বা নিয়ৎ করতে হবে ইহা ফরয ইবাদত নিয়ৎ
করা ওয়াযিব
) মুখে উচ্চারন করে বা যাকাত গ্রহনকারীকে শুনিয়ে বলা প্রয়োজন নাই তবে মনে মনে
সংকল্প অবশ্যই করতে হবে আমি যাকাত আদায় করছি অন্যথায় যাকাত আদায় হবে
না ইহা সাধারন দান হিসাবে গন্য হবে
) যাকাতের টাকা পূর্বেই হিসাব করে রাখা থাকলে দেবার সময় পুনরায় নিয়াতের দরকার
হবে না
) কোন ব্যক্তিকে যাকাত দেবার সময় নিয়ৎ না করলে গ্রহনকারীর মাল বর্তমান থাকা
অবস্থায় নিয়ৎ করলেও যাকাত আদায় হবে
) বাৎসরিক যাকাত হিসাব করার পূর্বেও অগ্রীম হিসাবে যাকাত আদায় করা যাবে
) হাওলাত,ঋন, অথবা বাকি প্রদান করে পরবর্তিতে যাকাত এর নিয়াতে মাফ করে দিলে
যাকাত আদায় হবে না




 স্বামী-স্ত্রীর সম্পদ বা অলংকারের যাকাত কে দিবেঃ


স্বামী-স্ত্রীর সম্পদ একই পরিবারের গন্য হলেও মালিকানা ভিন্ন তাই পৃথকভাবে নিজ নিজ সম্পদের যাকাত আদায় করতে হবে স্ত্রীর যদি অলংকার ব্যতিত অন্য কোন সম্পদ না থাকে তবে স্ত্রীর হাত খরচের টাকা বাঁচিয়ে বা কিছু অলংকার বিক্রি করে যাকাত আদায় করতে হবে অলংকারের যাকাত স্ত্রীর পে স্বামী আদায় করলেও যাকাত আদায় হয়ে যাবে

বিগত বৎসরের কাযা যাকাতঃ
হযরত আবু বকর (রাঃ) বলেনঃ আল্লাহ্র শপথ, যে ব্যক্তি সালাত যাকাতের মধ্যে পার্থক্য করে অবশ্যই আমি তাহার বিরুদ্ধে জিহাদ করিব আমাদের বুঝতে হবে নামাজ-রোজার মত যাকাতের একই হুকুম অজ্ঞতা বা অলসতা বশত ফরজ ছেড়ে দিয়ে শুধূ তওবা করলে দায়িত্ব পালন হবে না পিছনের অনাদায়ী যাকাত হিসাব করে আদায়ের ব্যবস্থা করতে হবে


যাকাত আদায়ের সময়ঃ
রাসূলে পাক (সাঃ) বলেছেন ধনীর ধন-সম্পদ পুরো এক বছর কাল মালিকের অধিকারে না থাকলে তার উপর যাকাত আদায় করার বাধ্যবাধকতা নেই অর্থাৎ যে কোন নিসাব পরিমান সম্পদ পূর্ণ একবছর কাল ভোগ দখলের পরই যাকাত আদায় করতে হয় প্রতি বৎসর একটি নির্দিষ্ট তারিখে সংসারে যাবতীয় প্রয়োজন মেটানোর পর যে সম্পদ/মাল/অর্থ ইত্যাদি অতিরিক্ত বা অবশিষ্ট থাকে তাহা যদি নিসাব পরিমান হয় তবে শর্তমতো যাকাত প্রদান করতে হবে তবে কৃষিজাত ফসলের উশর (যাকাত) ফসল ঘরে তোলার সময়ই হিসাবমত আদায় করতে হবে রাসুল(সাঃ) বলেছেন, রমজানের একটি নফল ইবাদত অন্য
সময়ের ফরজ ইবাদতের সমান এবং একটি ফরজ ইবাদত অন্য সময়ের ৭০টি ফরজের সমান রমজানে ইবাদতের সওয়াব অন্য মাসের চেয়ে অনেক বেশী তাই মুসলমানেরা সাধারনত রমজানে যাকাত আদায় করে থাকেনরমজানের ১ম তারিখকে যাকাত বৎসরের তারিখ নির্দিষ্ট করে মালদার তার সকল ¤পদের হিসাব করে যাকাত নির্ধারন করতে পারেন



যাকাত সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন


Share this :

Previous
Next Post »