Islamic World ............
'আনয়াম' (গৃহপালিত পশু) শব্দটা দ্বারা আরবি ভাষায় উট, গরু, মেষ ও ছাগল বুঝায়। আর 'বাহীমা' যে কোনো বিচরণশীল প্রাণীকে বলা হয়। আল্লাহ যদি শুধু এ কথা বলতেন যে, তোমাদের জন্যে আনয়াম হালাল করা হয়েছে তাহলে শুধু গরু ছাগল উট ও ভেড়া এই চার প্রকারের গৃহপালিত পশুই হালাল হতো। কিন্তু নির্দেশটি যে ভাষায় ঘোষিত হয়েছে তাহলো "গৃহপালিত ধরণের সকল বিচরণশীল চতুষ্পদ জন্তু তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে" এ দ্বারা নির্দেশের আওতা প্রশস্ততর হয়ে যায় এবং গৃহপালিত প্রকৃতির সকল পশু হালালের অন্তর্ভুক্ত হয়। অর্থাৎ যাদের ধারালো দাঁত নেই, জন্তু খাদ্য গ্রহণের পরিবর্তে উদ্ভিদ জাতীয় খাদ্য গ্রহণ এবং অন্যান্য পাশবিক বৈশিষ্ট্যের দিক দিয়ে আরবের গৃহপালিত জন্তুসমূহের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হয়। এ আয়াত থেকে এ কথাও বুঝা যায় যে, যেসব চতুষ্পদ জন্তু গৃহপালিত পশুর বিপরীত ধারালো দাঁত বিশিষ্ট হয় এবং অন্যান্য জন্তুকে মেরে খায় তা হালাল নয়। এই ইঙ্গিতকে রসূল সা. স্পষ্ট করে হাদিস দ্ব্যর্থহীন ভাষায় নির্দেশ দিয়েছেন যে,
হিংস্র জন্তু হারাম। অনুরূপভাবে যেসব পাখির বিশেষ ধরণের নখর রয়েছে এবং অন্যান্য প্রাণীকে শিকার করে খায় অথবা মৃত প্রাণী খায়, সেগুলোকেও রসূল সা. হারাম ঘোষণা করেছেন।
বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন
"তোমাদের
জন্য গৃহপালিত
ধরণের চারণশীল
প্রাণীকে হালাল
করা হয়েছে।"
(সূরা আল
মায়েদা : ১)
এ আয়াতে গৃহপালিত জন্তু বা তদসদৃশ বিচারণশীল প্রাণী হালাল করা হয়েছে। আর যেসব প্রাণী মাংসভোজী ও হিংস্র, গোশত খাওয়ার জন্য জানোয়ারকে হত্যা বা জখম করে দীর্ণ করে ছিঁড়ে খায়, সেগুলো এর আওতাবহির্ভূত। তাফহীমূল কুরআনের লেখক এ আয়াতের ব্যাপকভিত্তিক তাফসির করেছেন তা নিম্নে দেয়া হলো :
এ আয়াতে গৃহপালিত জন্তু বা তদসদৃশ বিচারণশীল প্রাণী হালাল করা হয়েছে। আর যেসব প্রাণী মাংসভোজী ও হিংস্র, গোশত খাওয়ার জন্য জানোয়ারকে হত্যা বা জখম করে দীর্ণ করে ছিঁড়ে খায়, সেগুলো এর আওতাবহির্ভূত। তাফহীমূল কুরআনের লেখক এ আয়াতের ব্যাপকভিত্তিক তাফসির করেছেন তা নিম্নে দেয়া হলো :
'আনয়াম' (গৃহপালিত পশু) শব্দটা দ্বারা আরবি ভাষায় উট, গরু, মেষ ও ছাগল বুঝায়। আর 'বাহীমা' যে কোনো বিচরণশীল প্রাণীকে বলা হয়। আল্লাহ যদি শুধু এ কথা বলতেন যে, তোমাদের জন্যে আনয়াম হালাল করা হয়েছে তাহলে শুধু গরু ছাগল উট ও ভেড়া এই চার প্রকারের গৃহপালিত পশুই হালাল হতো। কিন্তু নির্দেশটি যে ভাষায় ঘোষিত হয়েছে তাহলো "গৃহপালিত ধরণের সকল বিচরণশীল চতুষ্পদ জন্তু তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে" এ দ্বারা নির্দেশের আওতা প্রশস্ততর হয়ে যায় এবং গৃহপালিত প্রকৃতির সকল পশু হালালের অন্তর্ভুক্ত হয়। অর্থাৎ যাদের ধারালো দাঁত নেই, জন্তু খাদ্য গ্রহণের পরিবর্তে উদ্ভিদ জাতীয় খাদ্য গ্রহণ এবং অন্যান্য পাশবিক বৈশিষ্ট্যের দিক দিয়ে আরবের গৃহপালিত জন্তুসমূহের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হয়। এ আয়াত থেকে এ কথাও বুঝা যায় যে, যেসব চতুষ্পদ জন্তু গৃহপালিত পশুর বিপরীত ধারালো দাঁত বিশিষ্ট হয় এবং অন্যান্য জন্তুকে মেরে খায় তা হালাল নয়। এই ইঙ্গিতকে রসূল সা. স্পষ্ট করে হাদিস দ্ব্যর্থহীন ভাষায় নির্দেশ দিয়েছেন যে,
হিংস্র জন্তু হারাম। অনুরূপভাবে যেসব পাখির বিশেষ ধরণের নখর রয়েছে এবং অন্যান্য প্রাণীকে শিকার করে খায় অথবা মৃত প্রাণী খায়, সেগুলোকেও রসূল সা. হারাম ঘোষণা করেছেন।
হযরত ইবনে
আব্বাস বর্ণনা
করেছেন :
"রসূল
সা. সকল
ধারালো দাঁতবিশিষ্ট
হিংস্র প্রাণী
এবং (ধারালো
নখর দ্বারা
শিকার ধরতে
অভ্যস্ত) সকল
প্রাণী (খাওয়া)
নিষিদ্ধ করেছেন।"
অন্যান্য বহু
সাহাবি থেকেও
এই বক্তব্যের
সকর্থনে হাদিস
বর্ণিত হয়েছে।
কুরআন ও
হাদিসের এই
মূলনীতি প্রয়োগ
করে হানাফি
ফেকাহ শাস্ত্রবিদগণ
যেসব জন্তুকে
হিংস্র প্রাণী
আখ্যায়িত করেছেন
ও তা
হারাম বলে
ফতোয়া দিয়েছেন
তার মধ্যে
উল্লেখযোগ্য জন্তুগুলো
হলো : সিংহ,
বাঘ, চিতাবাঘ,
ভালুক, শিয়াল,
বিড়াল, কুকুর,
গণ্ডার, বাগডাসা,
গুইসাপ, পালিত
গাধা। কুকুর
ও বিড়ালের
হারাম হওয়া
এবং খরগোশের
হালাল হওয়ার
কথা হাদিসেও
বলা হয়েছে।
হাতি হানাফি
মাযহাবে হারাম।
হানাফি মাযহাবের
সাধারণ ফতোয়া
অনুসারে চিল,
শকুন, ঈগল
ও বাজপাখি
হারাম পাখিরূপে
গণ্য। বক,
তোতা, ময়না,
কবুতর, তিতির,
চড়ুই, আবাবীল,
নীলকণ্ঠ, হুদহুদ,
কোকিল ও
বাবুই হানাফি
মাযহাবে হালাল।
কেননা এগুলো
স্বভাবসুলভভাবে শিকারি
ও মাংসভোজি
নয়। এগুলো
নখর দিয়ে
প্রাণী ধরেনা
এবং তা
দীর্ণ করে
ও ছিঁড়ে
খায়না। কোয়েল
হারাম না
হালাল সে
সম্পর্কে কোনো
গ্রন্থে স্পষ্টোক্তি
পাওয়া যায়নি।
তবে আমি
মনে করি,
এটি কোকিলের
মতো একটি
অশিকারি পাখি
এবং তা
হালাল হওয়া
উচিত।
কাক হারাম
কি হালাল
এ সম্পর্কে
হানাফি ফকীহদের
মতভেদ রয়েছে।
কেউ কেউ
এর শ্রেণীবিন্যাস
করেছেন এবং
কোনো কোনোটিকে
হালাল এবং
কোনো কোনোটি
হারাম বলেছেন।
সাম্প্রতিককালে কাক
নিয়ে নতুন
করে বিতর্ক
উঠেছে। একটি
মহল প্রকাশ্য
জনসমাবেশে সাধারণ
দেশী কাক
রান্না করে
খাওয়ার মহড়া
দেখিয়েছেন।আমার মতে
সব ধরণের
কাকই হারাম।
বুখারি, মুসলিম
ও অন্যান্য
সহীহ হাদিস
গ্রন্থে রসূল
সা.-এর
হাদিসে উদ্ধৃত
হয়েছে যে,
পাঁচ ধরণের
প্রাণী ক্ষতিকর
ও অবাঞ্ছিত
(পাপিষ্ট) এবং
এগুলো হারাম
শরিফের ভেতরে
ও বাইরে
সর্বত্র হত্যা
করা চাই।
কাক, চিল,
বিচ্ছু, ইঁদুর
ও হিংস্র
কুকুর। কোনো
হালাল প্রাণীকে
এভাবে পাইকারি
হত্যার নির্দেশ
কিভাবে দেয়া
যেতে পারে?
কাজেই এসব
প্রাণী সম্পর্কে
বিতর্কের কোনো
অবকাশই থাকতে
পারেনা। আরব
দেশে আমাদের
দেশের মতো
কাক ব্যাপকভাবে
পাওয়া যায়।
কিন্তু রসূল
সা. বা
সাহাবায়ে কেরাম
কর্তৃক তা
খাওয়া বা
হালাল আখ্যায়িত
করার কথা
কোনো হাদিসেই
পাওয়া যায়না।
সামুদ্রিক প্রাণী
হালাল হওয়ার
কথা কুরআনে
নীতিগতভাবে বলা
হয়েছে। সূরা
মায়েদার ৯৬
নম্বর আয়াতে
বলা হয়েছে
:
--------------------------------------------------
"তোমাদের জন্য
সমুদ্রের শিকার
ও খাদ্য
হালাল করা
হয়েছে।"
যদিও উপরোক্ত
নির্দেশটি প্রাথমিকভাবে
এহরাম বাঁধা
অবস্থার সাথে
সংশ্লিষ্ট। কিন্তু
এ কথা
বলার অপেক্ষা
রাখেনা যে,
এহরাম অবস্থায়ও
(যখন কোনো
ভূ-চর
প্রাণী শিকার
করে হারাম)
যে প্রাণী
শিকার করা
ও খাওয়া
জায়েয এবং
হালাল, সেই
জলজ প্রাণী
সর্বাবস্থায় হালাল
হবে। তবে
এ দ্বারা
কি ধরণের
প্রাণী বুঝানো
হয়েছে, সেটা
বিশদভাবে ব্যাখ্যা
সাপেক্ষ বটে।
সামুদ্রিক প্রাণীর
মধ্যে মাছ
তো নিশ্চিতভাবেই
পড়ে। হাদিসেও
তা জবাই
ছাড়া হালাল
বলে ঘোষণা
করা হয়েছে।
আলখিবতের প্রসিদ্ধ
ঘটনা এ
প্রসঙ্গে উল্লেখ
করা যেতে
পারে। আলাখিবতের
সামরিক অভিযানকালে
সাহাবায়ে কেরামের
হাতে সমুদ্রের
তরঙ্গমালার মধ্যে
তিমি মাছ
ধরা পড়ে।
তারা এ
মাছের গোশত
খান এবং
রসূল সা.-এর কাছে
হাজির করলে
তিনিও তা
খান। তবে
অন্যান্য সামুদ্রিক
জন্তুর ব্যাপার
বিতর্কিত।
হানাফি মাযহাব
অনুসারে জলজ
প্রাণীর মধ্যে
শুধুমাত্র মাছ
অথবা মাছের
সাথে সঠিক
সাদৃশ্যপূর্ণ ও
সাঁতার কাটা
প্রাণী হালাল।
এ মতের
সপক্ষে হানাফিদের
যুক্তি হলো,
কুরআন শরিফে
পবিত্র জিনিস
হালাল ও
নোংরা জিনিসকে
হারাম করা
হয়েছে। মাছ
ছাড়া অন্যান্য
জলজ প্রাণীকে
মানুষ স্বভাবতই
ঘৃণা করে।
এ ধরণের
জলজ প্রাণী
রসূল সা.
ও সাহাবায়ে
কেরাম খেয়েছেন
বলে প্রমাণ
পাওয়া যায়না।
অধিকন্তু আবু
দাউদ ও
নাসায়িতে হযরত
আব্দুর রহমান
বিন উসমান
থেকে বর্ণিত
আছে যে,
রসূলুল্লাহ সা.
জনৈক চিকিৎসককে
ব্যাঙ মেরে
ওষুধ বানাতে
নিষেধ করেছিলেন,
যদিও তা
জলজ প্রাণী।
যে মাছ
আপনা আপনি
পানিতে মরে
ভাসতে থাকে,
হানাফি মতে
তা খাওয়াও
মাকরূহ তাহরীমী।
বিশেষ করে
সেই মৃত
মাছ যদি
চিৎ হয়ে
ভাসতে থাকে।
তবে কোনো
মাছ নদী
বা
খাল
থেকে
জীবিত
ধরে
আনার
পর
কোনো
সংকীর্ণ
জলাশয়
বা
পাত্রে
রাখার
পর
মারা
যায়,
তা
মাকরূহ
নয়,
সম্পূর্ণ
হালাল। কাকড়া, ব্যাঙ ও কুমির হানাফিদের মতে হারাম।
ভূ-চর
প্রাণীর
মধ্যে
সরীসৃপ
ও
পোকা
মাকড়ও
হানাফিগণ
নোংরা
প্রাণী
আখ্যায়িত
করে
ও
হারাম
মনে
করে। সাপ, গিরগিটি, গুইসাপ ও কেঁচো তাদের মতে হালাল নয়।
[তরজমানুল
কুরআন,
নভেম্বর
১৯৭৮]
বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন