মাহরাম ও গায়রে মাহরাম
ইসলামে যাদের সাথে স্বাক্ষাত করা যায়েয ্আছে তাদের কে মাহরাম ও যাদের সাথে স্বাক্ষাত করা যায়েয নেই তাদের কে গায়রে মাহরাম বলে। এবিষয়ে কুরান হাদিসের আলোকে কিছু আলোচনা পেশ করা হল:
মাহরাম ব্যক্তিদের সামনে নারীগণ স্বীয় সৌন্দর্য প্রকাশ করতে পারবে (নূর ৩১।) এখানে সৌন্দর্যের অর্থ হ’ল, মাথা, গলা, হাত, পা এবং যেসব অঙ্গে সাজ-সজ্জার জন্য অলংকার ইত্যাদি পরিধান করা হয় সেগুলিকে বুঝায় (ইবনু কাছীর।) এই অঙ্গগুলি মাহরামের সামনে প্রকাশ করা বৈধ। তবে অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে যেন দেহের গোপন ও বাহ্যিক সৌন্দর্য এমনভাবে প্রকাশ না পায়, যা শালীনতা বিরোধী এবং অন্যকে আকৃষ্ট করে। তাছাড়া মাহরাম পুরুষদেরও তাদের কাছে যাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।
জনৈক ব্যক্তি রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট তার মায়ের কাছে যাওয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করল। তিনি বললেন, তুমি তার অনুমতি নাও। তুমি কি তোমার মাকে উলঙ্গ অবস্থায় দেখতে চাও? (মুওয়াত্ত্বা, মিশকাত হা/৪৬৭৪)।
*মাহরাম মোট ১৪ জন । ১৪ জন ছাড়া বাকী সবাই “গায়রে মাহরাম” একথার অর্থ হল যে, তাদের বিবাহ করা জায়েয। এবং তাদের সাথে সর্বক্ষেত্রে শরয়ী পর্দার বিধান মেনে চলতে হয়।
*যে ১৪ জনকে মাহরাম বলা হয় সেটার দলীল হল সূরায়ে নিসার ২৩ ও২৪ নং আয়াত:
حُرِّمَتْ عَلَيْكُمْ أُمَّهَاتُكُمْ وَبَنَاتُكُمْ وَأَخَوَاتُكُمْ وَعَمَّاتُكُمْ وَخَالاَتُكُمْ وَبَنَاتُ الأَخِ وَبَنَاتُ الأُخْتِ وَأُمَّهَاتُكُمُ اللاَّتِي أَرْضَعْنَكُمْ وَأَخَوَاتُكُم مِّنَ الرَّضَاعَةِ وَأُمَّهَاتُ نِسَآئِكُمْ وَرَبَائِبُكُمُ اللاَّتِي فِي حُجُورِكُم مِّن نِّسَآئِكُمُ اللاَّتِي دَخَلْتُم بِهِنَّ فَإِن لَّمْ تَكُونُواْ دَخَلْتُم بِهِنَّ فَلاَ جُنَاحَ عَلَيْكُمْ وَحَلاَئِلُ أَبْنَائِكُمُ الَّذِينَ مِنْ أَصْلاَبِكُمْ وَأَن تَجْمَعُواْ بَيْنَ الأُخْتَيْنِ إَلاَّ مَا قَدْ سَلَفَ إِنَّ اللّهَ كَانَ
غَفُورًا رَّحِيمًا
অর্থাৎ: তোমাদের জন্যে হারাম করা হয়েছে তোমাদের মাতা, তোমাদের কন্যা, তোমাদের বোন, তোমাদের ফুফু, তোমাদের খালা, ভ্রাতৃকণ্যা; ভগিনীকণ্যা তোমাদের সে মাতা, যারা তোমাদেরকে স্তন্যপান করিয়েছে, তোমাদের দুধ-বোন, তোমাদের স্ত্রীদের মাতা, তোমরা যাদের সাথে সহবাস করেছ সে স্ত্রীদের কন্যা যারা তোমাদের লালন-পালনে আছে। যদি তাদের সাথে সহবাস না করে থাক, তবে এ বিবাহে তোমাদের কোন গোনাহ নেই। তোমাদের ঔরসজাত পুত্রদের স্ত্রী এবং দুই বোনকে একত্রে বিবাহ করা; কিন্তু যা অতীত হয়ে গেছে। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাকরী, দয়ালু।
وَالْمُحْصَنَاتُ مِنَ النِّسَاء إِلاَّ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ كِتَابَ اللّهِ عَلَيْكُمْ وَأُحِلَّ لَكُم مَّا وَرَاء ذَلِكُمْ أَن تَبْتَغُواْ بِأَمْوَالِكُم مُّحْصِنِينَ غَيْرَ مُسَافِحِينَ فَمَا اسْتَمْتَعْتُم بِهِ مِنْهُنَّ فَآتُوهُنَّ أُجُورَهُنَّ فَرِيضَةً وَلاَ جُنَاحَ عَلَيْكُمْ فِيمَا تَرَاضَيْتُم بِهِ مِن بَعْدِ الْفَرِيضَةِ إِنَّ اللّهَ كَانَ عَلِيمًا حَكِيمًا
এবং নারীদের মধ্যে তাদের ছাড়া সকল সধবা স্ত্রীলোক তোমাদের জন্যে নিষিদ্ধ; তোমাদের দক্ষিণ হস্ত যাদের মালিক হয়ে যায়-এটা তোমাদের জন্য আল্লাহর হুকুম। এদেরকে ছাড়া তোমাদের জন্যে সব নারী হালাল করা হয়েছে, শর্ত এই যে, তোমরা তাদেরকে স্বীয় অর্থের বিনিময়ে তলব করবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করার জন্য-ব্যভিচারের জন্য নয়। অনন্তর তাদের মধ্যে যাকে তোমরা ভোগ করবে, তাকে তার নির্ধারিত হক দান কর। তোমাদের কোন গোনাহ হবে না যদি নির্ধারণের পর তোমরা পরস্পরে সম্মত হও। নিশ্চয় আল্লাহ সুবিজ্ঞ, রহস্যবিদ।
মহিলাদের মাহরাম কারা?
====================
এখানে মাহরাম তারাই যাদের সাথে বিয়ে হওয়া স্থায়ীভাবে হারাম।
মাহরাম- এর কিছু শর্ত:-------------------------
মাহরামকে অবশ্যই মুসলিম, বিবেকবান এবং প্রাপ্ত বয়স্ক হতে হবে। মাহরাম তিন শ্রেণিতে বিভক্ত:---
এক. বংশীয় মাহরাম---
বংশীয় মাহরাম মোট সাত শ্রেণি:
১- মহিলার মূল যেমন, পিতা, দাদা, নানা। (যত উপরেই যাক)
২- মহিলার শাখা যেমন, পুত্র, পুত্রের পুত্র, কন্যার পুত্র। (যত নীচেই যাক)
৩- মহিলার ভাই। আপন ভাই বা বৈপিত্রেয় ভাই অথবা বৈমাত্রেয় ভাই।
৪- মহিলার চাচা। আপন চাচা বা বৈপিত্রেয় চাচা অথবা বৈমাত্রেয় চাচা। অথবা কোন মহিলার পিতা বা মাতার চাচা।
৫- মহিলার মামা, আপন মামা বা বৈপিত্রেয় মামা অথবা বৈমাত্রেয় মামা। অথবা কোন মহিলার পিতা বা মাতার মামা।
৬- ভাইপো, ভাইপোর ছেলে, ভাইপোর কন্যাদের ছেলে (যত নীচেই যাক)।
৭- বোনপো, বোনপোর ছেলে, বোনপোর কন্যাদের ছেলে (যত নীচেই যাক)।
দুই. দুধ খাওয়াজনিত মাহরাম-
দুধ খাওয়াজনিত মাহরামও বংশীয় মাহরামের মত সাত শ্রেণি।
যাদের বর্ণনা উপরে চলে গেছে।
তিন. বৈবাহিক সম্পর্কের কারণে মাহরাম-
বৈবাহিক কারণে চার শ্রেণি মাহরাম হয়।
১- মহিলার স্বামীর পুত্রগণ, তাদের পুত্রের পুত্রগণ, কন্যার পুত্রগণ (যত নীচেই যাক)।
২- মহিলার স্বামীর পিতা, দাদা, নানা (যত উপরেই যাক)।
৩- মহিলার কন্যার স্বামী, মহিলার পুত্র সন্তানের মেয়ের স্বামী, মহিলার কন্যা সন্তানের মেয়ের স্বামী (যত নীচেই যাক)
৪- যে সমস্ত মহিলাদের সাথে সহবাস হয়েছে সে সমস্ত মহিলার মায়ের স্বামী এবং দাদি বা নানির স্বামী।
=========================================
{সূত্র : ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব}