ইসলামের দৃষ্টিতে জন্ম নিয়ন্ত্রন পদ্ধতি গ্রহন করার বিধান। আল কুরান ও হাদীস এর আলোকে

. প্রথমে জানতে হবে মানুষ জন্ম নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা রাখেন কিনা?
আল্লাহু রাব্বুলআলামীন বলেন :
{الَّذِي خَلَقَ الْمَوْتَ وَالْحَيَاةَ لِيَبْلُوَكُمْ أَيُّكُمْ أَحْسَنُ عَمَلاً}
যিনি সৃষ্টি করেছেন মৃত্যু জীবন তোমাদেরকে পরীক্ষা করার জন্য (মূলক : )
এর দ্বারা বুঝা গেল মানুষ মৃত্যুও জীবনের মালিক নয় তা কারো নিয়ন্ত্রণাধীন নয়
. জন্ম নিয়ন্ত্রণের নামে কোন পদ্ধতি যায়েয কিনা তা নির্ভর করবে প্রত্যেকের নিয়তের উপর কারণ রসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন :
إنما لاعمال باالنيات
সকল কর্মই নিয়তের উপর নির্ভরশীল
(বুখারী প্রথম হাদীস মিশকাত প্রথম হাদীস মুত্তাফাকুন আলাইহে)
এবার দেখার বিষয় হল আপনি কোন নিয়তে জন্মনিন্ত্রণের পদ্ধতিগ্রহণ করবেন
আল্লাহ তাআলার সৃষ্টির একটি নিয়ম আছে আর মানুষ সৃষ্টির নিয়ম হল স্বামী স্ত্রী মিলনের মাধ্যমে জন্ম দান করা অতএব নিয়মের মধ্যে ব্যতিক্রম করা যাবে না যথা আল্লাহ বলেন-
{وَمَنْ يَتَعَدَّ حُدُودَ اللَّهِ فَقَدْ ظَلَمَ نَفْسَهُ}
যে ব্যক্তি আল্লাহর নির্দেশিত সীমালঙ্ঘন করে, সে নিজের উপর যুলুম করে থাকে (তালাক : )
শয়তান বলে ছিল :
{وَلَآمُرَنَّهُمْ فَلَيُغَيِّرُنَّ خَلْقَ اللَّهِ}
“(শয়তান বললো) আমি আদম সন্তানদের আদেশ দেব, আর তারা আল্লাহর গঠন প্রকৃতিতে পরিবর্তন সাধন করবে” (নিসা : ১১৯)
আর পস্পরের মিলনের মধ্যেই রয়েছে শান্তি ভালবাসা যথা আল্লাহ বলেন-
{وَمِنْ آيَاتِهِ أَنْ خَلَقَ لَكُمْ مِنْ أَنْفُسِكُمْ أَزْوَاجاً لِتَسْكُنُوا إِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُمْ مَوَدَّةً وَرَحْمَةً}
আর তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য হতে সৃষ্টি করেছেন তোমাদের সঙ্গীণীদেরকে যাতে তোমরা তাদের নিকট শান্তি পাও এবং তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক ভালবাসাও দয়া সৃষ্টি করেছেন” (রূম : ২১)
নারীরা হল ক্ষেত স্বরূপ :
{نِسَاؤُكُمْ حَرْثٌ لَكُمْ فَأْتُوا حَرْثَكُمْ أَنَّى شِئْتُمْ وَقَدِّمُوا}
তোমাদের স্ত্রীগণ তোমাদের ফসলের জমির মত সুতরাং তোমাদের ইচ্ছানুযায়ী জমিতে যাও এবং ভবিষ্যতের সংস্থান কর” (বাকারাহ : ২২৩)
আপনি কি খাদ্যের অভাবে তা গ্রহণ করবেন?
তা করা যাবে না তার কারণ আল্লাহ বলেন :
{قَدْ خَسِرَ الَّذِينَ قَتَلُوا أَوْلادَهُمْ سَفَهاً بِغَيْرِ عِلْمٍ وَحَرَّمُوا مَا رَزَقَهُمُ اللَّهُ افْتِرَاءً عَلَى اللَّهِ}
যারা অজ্ঞতা নির্বুদ্ধিতার দরুণ আল্লাহ প্রদত্ত রিযিককে আল্লাহরই প্রতি মিথ্যা দোষারোপ করে নিজেদের জন্য হারাম করে দিয়েছে এবং সন্তানদের হত্যা করেছে তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে
(আনআম : ১৪০)
অন্যত্র বলেন-
{وَلا تَقْتُلُوا أَوْلادَكُمْ خَشْيَةَ إِمْلاقٍ نَحْنُ نَرْزُقُهُمْ وَإِيَّاكُمْ إِنَّ قَتْلَهُمْ كَانَ خِطْئاً كَبِيراً}
তোমরা অভাবের আশঙ্কায় সন্তানকে হত্যা করো না আমি তাদের তোমাদের রিযিকের ব্যবস্থা করে থাকি, তাদের হত্যা করা নিঃসন্দেহে মহাপাপ” (বানী ইসরাঈল : ৩১)
জোর করে ইচ্ছামত করবেন তাও করা যাবে না
আল্লাহ তাআলা বলেন
{وَإِذَا تَوَلَّى سَعَى فِي الْأَرْضِ لِيُفْسِدَ فِيهَا وَيُهْلِكَ الْحَرْثَ وَالنَّسْلَ وَاللَّهُ لا يُحِبُّ الْفَسَادَ}
আর যখন যে ক্ষমতা হাতে পায় তখন আল্লাহর দুনিয়ার বিপর্যয় সৃষ্টি এবং ফল শস্য সন্তান-সন্ততি ধ্বংস করার পরিকল্পনা করে” (বাকারাহ : ১০৫)
অন্যত্র বলেন :
{وَإِنْ مِنْ شَيْءٍ إِلَّا عِنْدَنَا خَزَائِنُهُ وَمَا نُنَزِّلُهُ إِلَّا بِقَدَرٍ مَعْلُومٍ}
এমন কোন জীব নেই যার জীবন ধারনোপযোগী সরঞ্জামাদি আমার কাছে নেই এবং একটি সুনির্দিষ্ট পরিমান ব্যতিত আমি কোন কিছুই প্রেরণ করি না” (হিজর : ২১)
অন্যত্র বলেন :
{وَمَا مِنْ دَابَّةٍ فِي الْأَرْضِ إِلَّا عَلَى اللَّهِ رِزْقُهَا}
পৃথিবীতে বিচরণশীল এমন কোন জীব নেই যার রিযিকের দাইত্ব আল্লাহ তাআলা গ্রহণ করেননি (হূদ : )
অন্যত্র বলেন :
{وَكَأَيِّنْ مِنْ دَابَّةٍ لا تَحْمِلُ رِزْقَهَا اللَّهُ يَرْزُقُهَا وَإِيَّاكُمْ}
অসংখ্য জীব এমন আছে যারা কোন মওজুদ খাদ্য ভাণ্ডার বয়ে বেড়ায় না, অথচ আল্লাহ- এদের রিয্ক দিয়ে থাকেন তিনি তোমাদেরও রিয্কদাতা” (আনকাবুত : ৬০)
তিনি আরো বলেন :
{إِنَّ اللَّهَ هُوَ الرَّزَّاقُ ذُو الْقُوَّةِ الْمَتِينُ}
নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাআলাই রিয্কদাতা, মহাশক্তিশালী পরাক্রান্ত” (যারিয়াহ : ৫৮)
অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন :
{لَهُ مَقَالِيدُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ يَبْسُطُ الرِّزْقَ لِمَنْ يَشَاءُ وَيَقْدِرُ}
আসমান জমিনের যাবতীয় সম্পদ একমাত্র তারই আয়ত্তাধীন তিনি যাকে ইচ্ছা প্রচুর্য দান করেন এবং যাকে ই্চছা অভাবের মধ্যে নিক্ষেপ করেন” (শুরা : ১২)
আল্লাহ আরো বলেন :
وَجَعَلْنَا لَكُمْ فِيهَا مَعَايِشَ وَمَنْ لَسْتُمْ لَهُ بِرَازِقِينَ – {وَإِنْ مِنْ شَيْءٍ إِلَّا عِنْدَنَا خَزَائِنُهُ وَمَا نُنَزِّلُهُ إِلَّا بِقَدَرٍ مَعْلُومٍ
আমি পৃথিবীতে তোমাদের জন্যও রিয্কের সংস্থান করেছি এবং তাদের জন্যও যাদের রিয্কদাতা তোমারা নও এমন কোন বস্তু নেই যার ভাণ্ডার আমার হাতে নেই আর ভাণ্ডার থেকে আমি এক পরিকল্পিত হিসাব অনুসারে বিভিন্ন সময় রেযেক নাজিল করে থাকি” (হিজর : ২০-২১)
অন্যত্র বলেন :
{وَلا تَقْتُلُوا أَوْلادَكُمْ خَشْيَةَ إِمْلاقٍ نَحْنُ نَرْزُقُهُمْ وَإِيَّاكُمْ}
দারিদ্রের ভয়ে তোমাদের সন্তানদের হত্যা করো না আমি তাদের এবং তোমাদের রিয্ক দাতা
(বানী ইসরাঈল : ৩১)
{فَابْتَغُوا عِنْدَ اللَّهِ الرِّزْقَ وَاعْبُدُوهُ وَاشْكُرُوا لَهُ}
সুতরাং আল্লাহর কাছে রিয্ক অনুসন্ধান করো, তারই বন্দেগী করো এবং তার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকো (আনকাবুত : ১৭)
যদি জায়গার অভাবে জন্ম নিয়ন্ত্রণ করবেন তাও করা যাবে না
কারণ আল্লাহ বলেন :
{إِنَّا كُلَّ شَيْءٍ خَلَقْنَاهُ بِقَدَرٍ}
নিশ্চয়ই আমি যাবতীয় বস্তু পরিমাণ মতো সৃষ্টি করেছি” (কামার : ৪৯)
অন্যত্র বলেন :
{وَمَا كُنَّا عَنِ الْخَلْقِ غَافِلِينَ}
আমি সৃষ্টি সম্পর্কে অমনোযোগী নই” (মুমিনূন : ১৭)
দীর্ঘ আলোচনা দ্বারা একথাই প্রমাণিত হল যে, খাদ্য, চিকিৎসা, বাসস্থান কোন অভাবের জন্য পরিবার পচিকল্পানার কোন পদ্ধতি ব্যবহার করা যাবে না তাহলে আল্লাহর উপর বিশ্বাস ঈমান নষ্ট হয়ে যাবে তবে শারীরিক সুস্থতার জন্য অস্থায়ীভাবে যে কোন পদ্ধতি গ্রহণ করা যায় তাও ১২০ দিনের পূর্বে কারণ ১২০দিন পর আল্লাহ পাক আত্মা দান করেন আর আত্মা আসার পর সন্তান নষ্ট করার নামই হল সন্তান হত্যা করা
যেমন বুখারী-মুসলিম হাদীসে রয়েছে :
أربعين يوما نطفة ثم يكون علقة مثل ذلك ثم يكون مضغة مثل ذلك ….ثم ينفخ فيه الروح (يخاري ومسلم)
অর্থাৎ মাতৃগর্ভে প্রথম ৪০ দিন শুক্ররূপে, অতঃপর ৪০ দিন জমাট রক্ত পিণ্ডরূপে এরপর ৪০ দিন মাংস পিণ্ডরূপে……এরপর তার মধ্যে রূহ ফুঁকে দেন (মিশকাত হাদীন- ৭৫)
আর সে দুনিয়ায় এসে কোথায় কখন কি খাবে, কোথায় থাকবে তাও লিখে দেয়া হয় তাও পাবেন উক্ত হাদীসে
كتب الله المقادير قبل أن يخلق السموات والأرض
আর মানুষ সৃষ্টির ৫০,০০০ পঞ্চাশ হাজার বছর পূর্ব তার ভাগ্য লিখে রাখা হয়েছে দেখুন :
(মিশকাত- ৭২)
অতএব আপনার খাদ্য, চিকিৎসা, বাসস্থানের জন্য চিন্তা করাটাই মহা পাপের কাজ
আর অস্থায়ী পদ্ধতি গ্রহণ করা অনুমতি নবী (সাঃ) থেকে পাওয়া যায়
যথা :
عن أبى سعيد الخدرى رضى الله عنه فاردنا انعذل ثم قفنا نعذل ورسول الله بين اظهرنا قبل أن نسأله عن ذلك قسالناه عن ذلك فقال ما عليكم أن لا تفعلوا ما من نسمة كائنة إلى يوم القيمة إلا وهي كائنة (بخاري صـ ৭৮৪، ومسلم صـ ৪৬৪، أبو داود صـ ২৯৫)
আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন আমরা আযল করার চিন্তা-ভাবনা করলাম অথচ রসূলুল্লাহ (সাঃ) তো আমাদের সঙ্গেই আছেন, তাকে ব্যপারে জিজ্ঞাসা করছি না কেন? অতঃপর তাকে জিজ্ঞাসা করা হল তিনি বললেন : যদি তোমরা তা কর, তবে তাতে দোষের কিছু নেই, তবে কিয়ামাত পর্যন্ত যারা সৃষ্টি হওয়ার, তারা সৃষ্টি হবেই- (রোধ করার ক্ষমতা কারো নেই)
(বুখারী- আরবী ২য় খণ্ড- ৭৮৪ পৃঃ ১৫ লাইন পরে; মুসলিম- আবরী ৪৬৪ পৃঃ, ১৬ লাইন পরে; আবূ দাউদ- আরবী ২৯৫ পৃঃ, ইসলামিক ফাউ.- হাঃ ২১৬৯)
অন্যত্র নবী (সাঃ) অনুমতি প্রদান করেন :
আনসারদের মধ্যে এক ব্যক্তি আযল করার অনুমতি চাইলে নবী (সাঃ) তাকে অনুমতি প্রদান করেন যথা-
فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم اعذل عنها أن شئت فانه سياتيها ما قدرلها-
একদিন এক ব্যক্তি নবী (সাঃ)’ নিকট এসে আরয করলেন, আমার একটি দাসী আছে, যার সাথে আমি সহবাসও করি, কিন্তু সে গর্ভবতী হোক তা আমি পছন্দ করি না তিনি বললেন : তুমি ইচ্ছা করলে তার সাথে আযল করতে পার, তবে জেনে রেখ! তার ভাগ্যে যা নির্ধারিত তা হবেই
(আবূ দাউদ- . ফা. বাংলা তৃতীয় খণ্ড- ২১৬৮)
মূল কথা হল শারীরিক সুস্থ্যতার জন্য যে কোন অস্থায়ী পদ্ধতি গ্রহণ করা যাবে কিন্তু অন্য কোন নিয়তে কোন স্থায়ী পদ্ধতিগ্রহণ করা যাবে না বিস্তারিত দেখুন নিুের প্রমাণপুঞ্জিতে :
আল কুরআন, বুখারী আরবী- ২য় খণ্ড- ৭৮৪ পৃঃ ১৫ লাইন পরে; মুসলিম- ১ম ৪৬৪ পৃঃ ১৬ লাইন পরে আবূ দাউদ- ২৯৫ পৃঃ লাইন পরে
বিঃ দ্রঃ কুরআন সহীহ হাদীস থাকতে কারো কোন মনগড়া ফাতওয়া মানা কোন প্রকার ঠিক হবে না দেখুন- সূরা নাহল : ৪৩ ৪৪ আয়াত
সন্তান হত্যাকারী
সন্তান হত্যা করা জঘন্যতম অত্যাচার তা অর্থনৈতিক কারণে হৌক অথবা সামাজিক লজ্জায় হৌক সন্তান হত্যা করলে বংশ ধ্বংস করা হয় অথচ বংশ বৃদ্ধি করা আল্লাহ্র ইচ্ছা সন্তান হত্যা করলে সন্তানের অধিকার বিনষ্ট করা হয় যে হত্যা সম্পর্কে ক্বিয়ামতের মাঠে সন্তানকে জিজ্ঞেস করা হবে সন্তান হত্যা মহাপাপ অবশ্য গর্ভ নিরোধ আর গর্ভপাত সমান নয় গর্ভপাত সন্তান হত্যা করা গর্ভ নিরোধ পাপ নয়, তবে সুখী সংসারের আশায় গর্ভ নিরোধ করলে শিরক হবে যা বড় পাপ আল্লাহ্ তাআলা বলেন,
وَلاَ تَقْتُلُوا أَوْلاَدَكُمْ خَشْيَةَ إِمْلاَقٍ نَحْنُ نَرْزُقُهُمْ وَإِيَّاكُمْ إِنَّ قَتْلَهُمْ كَانَ خِطْئًا كَبِيرًا(سورة الإسراء : ৩১)
তোমরা দারিদ্র্যতার ভয়ে তোমাদের সন্তানদেরকে হত্যা করো না আমি তাদেরকে রিযক দেই এবং তোমাদেরও আমিই দিচ্ছি তাদের হত্যা করা বড় বড় পাপ’ (ইসরা ৩১)
আল্লাহ্ তাআলা অন্যত্র বলেন,
وَإِذَا الْمَوْءُودَةُ سُئِلَتْبِأَيِّ ذَنْبٍ قُتِلَتْ (سورة التكوير -)
জীবন্ত কন্যাকে যখন (ক্বিয়ামতের দিন) জিজ্ঞেস করা হবেকোন অপরাধে তাকে হত্যা করা হয়েছে’ (তাকবীর -) অত্র আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, যত সন্তানকে গর্ভাবস্থায় হত্যা করা হচ্ছে সমস্ত সন্তানকে ক্বিয়ামতের দিন তার হত্যা করার কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَيُّ الذَّنْبِ أَكْبَرُ عِنْدَ اللهِ قَالَ أَنْ تَدْعُوْاللهَ نِدّاً وَهُوَ خَلَقَكَ قَالَ ثُمَّ أَيُّ قَالَ أَنْ تَقْتُلَ وَلَدَكَ خَشْيَةَ أَن يَطْعَمَ مَعَكَ.
আব্দুল্লাহ্ ইবনু মাসঊদ (রাযিঃ) বলেন, একজন লোক বলল, হে আল্লাহ্র রাসূল! সবচেয়ে বড় পাপ কোন্টি? রাসূল (ছাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, ‘তুমি আল্লাহ্র সঙ্গে কাউকে তার প্রতিদ্বন্দ¡ বানাবে অর্থাৎ শিরক করবে অথচ সে তোমাকে সৃষ্টি করেছেন তারপর কোন পাপ বড় মর্মে জিজ্ঞেস করা লে তিনি বলেন, ‘তুমি তোমার সন্তানকে হত্যা করবে ভয়ে যে, সে তোমার সাথে খাওয়ায় শরীক হবে’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৪৯) অত্র হাদীছে নবী (ছাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, আহার দানের ভয়ে সন্তান হত্যা করা পৃথিবীর দ্বিতীয় মহাপাপ
মৃত্যু যদি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারো তাহলে জন্ম কি করে নিয়য়ন্ত্রণ সম্ভব? অর্থাত জন্ম নিয়য়ন্ত্রণ কুফরী
জন্ম মৃত্যুর নিয়ন্ত্রক আল্লাহ রব্বুল আলামীন কোরআনুল কারিমে তিনি বলেনঃ
لِّلَّـهِ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۚ يَخْلُقُ مَا يَشَاءُ ۚ يَهَبُ لِمَن يَشَاءُ إِنَاثًا وَيَهَبُ لِمَن يَشَاءُ الذُّكُورَ﴿٤٩﴾ أَوْ يُزَوِّجُهُمْ ذُكْرَانًا وَإِنَاثًا ۖ وَيَجْعَلُ مَنيَشَاءُ عَقِيمًا ۚ إِنَّهُ عَلِيمٌ قَدِيرٌ
অর্থঃ নভোমন্ডল ভূমন্ডলের রাজত্ব আল্লাহ তাআলারই তিনি যা ইচ্ছা, সৃষ্টি করেন, যাকে ইচ্ছা কন্যা-সন্তান এবং যাকে ইচ্ছা পুত্র সন্তান দান করেন (49) অথবা তাদেরকে দান করেন পুত্র কন্যা উভয়ই এবং যাকে ইচ্ছা বন্ধ্যা করে দেননিশ্চয় তিনি সর্বজ্ঞ, ক্ষমতাশীল
জন্ম নিয়ন্ত্রণের ক্ষতি:
. মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, {الْمَالُ وَالْبَنُونَ زِينَةُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا} “সম্পদ সন্তান দুনিয়ার জীবনের সৌন্দর্যধন-সম্পদ সন্তান-সন্ততি মহান আল্লাহ তাআলার বহুত বড় নেয়ামত, যার প্রতি মানুষ স্বভাবতই ধাবিত আকৃষ্ট হয়ে থাকে দুটি হল, মানুষের জন্য তাদের দুনিয়ার জীবনের সৌন্দর্য, গৌরব সম্মান তবে বর্তমানে শয়তানের কুমন্ত্রণায় পড়ে কিছু মানুষ শুধু তাদের সন্তানের হার কমিয়ে আনার প্রবণতা অবলম্বন করছে স্বভাবতই তারা তাদের সম্পদকে কমানোর চেষ্টা কখনোই করে না অথচ মাল সন্তান-সন্ততি হল, মানুষের দুনিয়া পরকালের জীবনের অমূল্য সম্পদ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« إذا مات الإنسان انقطع عمله إلا من ثلاث : صدقة جارية ، أو علم ينتفع به ، أو ولد صالح يدعو له» .
অর্থাৎ, মানুষ যখন মারা যায়, তিনটি আমল ছাড়া তার সব আমল বন্ধ হয়ে যায়, এক- ছদকা জারিয়া, দুই-উপকারী ইলম, তিন-নেক সন্তান যে তার মৃত্যুর পর তার জন্য দোয়া করে
. ইসলাম মানুষকে অধিক সন্তানলাভের প্রতি উৎসাহ দিয়েছে এবং যে সব নারীরা অধিক সন্তানের অধিকারী হয়ে থাকে, তাদের বিবাহ করতে নির্দেশ দিয়েছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« تزوجوا الودود الولود ، فإني مكاثر بكم الأمم يوم القيامة» .
তোমরা অধিক সন্তানের অধিকারী স্বামীদের অধিক ভালোবাসে ধরনের মেয়েদের বিবাহ কর, কারণ, কিয়ামতের দিন আমি আমার উম্মত বেশি হওয়ার কারণে আল্লাহর দরবারে গর্ব করব
. মনে রাখতে হবে, ইসলাম শুধু মাত্র স্ত্রী রোগী হওয়ার কারণে জন্ম নিয়ন্ত্রণ করার অনুমতি দিয়েছে যদি কোনো মুসলিম ডাক্তার বলে যে, মহিলা সন্তান নিলে তার জীবনের জন্য তা হুমকি হবে, তখন তার জন্য জন্ম নিয়ন্ত্রণ করা বৈধ হতে পারে ছাড়া অন্য যে সব কারণে জন্ম নিয়ন্ত্রণ করা হয় যেমন, অভাব, লালন-পালন করতে না পারা, পড়া-লেখা করাতে অক্ষম হওয়া, নারীদের জন্য ক্ষতিকর ইত্যাদি ধরনের কোন কারণে জন্ম নিয়ন্ত্রণ করা সম্পূর্ণ অবৈধ মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, {الشَّيْطَانُ يَعِدُكُمُ الْفَقْرَ} . “শয়তান তোমাদের অভাবের ওয়াদা দেয়” [সূরা আল-বাক্বারা]
. ইসলামের শত্রুরা মুসলিমদের সংখ্যা কমানোর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত অথচ, তারা নিজেরা তাদের সংখ্যা বাড়ানো এবং তাদের অধিবাসীদের সংখ্যা যাতে সর্বোচ্চ হয়, তার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালায় তাদের সংখ্যা মুসলিমদের সংখ্যা হতে অধিক হয় এবং মুসলিমদের সংখ্যা কমে যায় কারণে তারা মুসলিমদের মধ্যে জন সংখ্যা বৃদ্ধিটাকে সমস্যা হিসেবে তুলে ধরে যেমনটি মিশর এবং আরও অন্যান্য মুসলিম দেশে বিষয়টি স্পষ্টভাবে পরিলক্ষিত তারা এটিকে পরিবার পরিকল্পনা করে নামকরণ করে থাকে, বাস্তবে তা পরিকল্পনা নয় বরং মুসলিম নিধন বলা যেতে পারে তারা আমাদের দেশে জন্ম নিয়ন্ত্রণের টেবলেটগুলো বিনা মূল্যে বিতরণ করে অথচ আমাদের দেশের অভাবী গরীবদের জন্য খাদ্য বিতরণ করে না অভাবীদের অভাব দূরীকরণের কোন চেষ্টা না করে মুসলিমদের সংখ্যা কমানোর চেষ্টা করে প্রশ্ন হল, মুসলিমরা কি ধরনের শরীয়ত বিরোধী কাজের পরিণাম সম্পর্কে একবারও ভেবে দেখছে?

Share this :

Previous
Next Post »