এক শিকারী বুজুর্গের ঘটনা

হযরত ইবরাহীম ইবনে শাবীব (রহঃ) বলেন, প্রতি শুক্রবার জুমুআর নামাজের পর আমরা তালিমের হালকার আয়োজন করিতাম। একবার এক অপরিচিত ব্যক্তি আমাদের মজলিসে আসিয়া শরীক হইল। তাহার গায়ে শুধূ একটি কাপড় জড়ানো ছিল। সে উপস্থিত আলেমগনকে লক্ষ করিয়া একটি প্রশ্ন করিল। মজলিস শেষ হওয়া পর্যন্ত আমরা তাহার প্রশ্নটি লইয়া আলোচনা করিলাম, কিন্তু তবুও উহার কোন সমাধান হইল না। লোকটি পরবর্তী সপ্তাহে আবার তালিমের হালকায় শরীক হইলে আমরা তাহার প্রশ্নের জবাব দিলাম। খোঁজ লইয়া জানা গেল, লোকটি বসরার অদূরে এক গ্রামের অধিবাসী এবং তাহার নাম আবু আব্দুল্লাহ পরে দীর্ঘদিন যাবৎ সে আমাদের এখানে যাতায়ত করিল এবং আমরা তাহার সঙ্গ লাভ করিয়া প্রীত হইলাম। কিন্তু হঠাৎ কি কারণে তাহার আগমন বন্ধ হইয়া গেল এবং আমরা তাহার অভাব অনুভব করিতে লাগিলাম।
কিছুদিন পর আমরা কয়েকজন তাহাকে সন্ধান করিতে তাহার গ্রামের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম। দীর্ঘ পথ অতিক্রমের পর সেই গ্রামে গিয়া তাহার এক প্রতিবেশীর নিকট জিজ্ঞাসা করিয়া জানা গেল, আবু আব্দুল্লাহ পেশায় একজন শিকারী। বর্তমানে সে শিকার করিতে গিয়াছে এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই সে ফিরিয়া আসিবে। আমরা তাহার জন্য অপেক্ষা করিতে লাগিলাম।
কিছুক্ষণ পরই আবু আব্দুল্লাহ ফিরিয়া আসিল। ঐ সময় তাহার গায়ে ছিল দুই খণ্ড কাপড় জড়ানো। তাহার এক হাতে ছিল কয়েকটি জবাই করা পাখী এবং অপর হাতে ছিল কয়েকটি জিবিত পাখি। নিকটে আসিয়া মৃদু হাস্য করিয়া সে আমাদিগকে সাদর সম্ভাসন জানাইল। সালাম-কালামের পর আমরা তাহাকে বলিলাম, ভাই আবু আব্দুল্লাহ! কতদিন হয় আমরা তোমার দর্শন হইতে বনচিত ।
তোমার উপস্থিতির ফলে আমাদের মজলিসের রওনক বৃদ্বি হইত। কি কারণে তুমি আমাদিগকে ত্যাগ করিয়াছ? জবাবে সে বলিল, আসল ব্যাপার হইল , আমার এক প্রতিবেশীর কাপড় পরিধান করিয়া আমি তোমাদের মজলিসে যাতায়ত করিতাম।
কিছু দিন হয় সে সফরে গিয়াছে। এই কারণে তোমাদের সেখানে যাওয়া হ নাই। যাহাই হউক, এখন তোমরা আমার ঘরে চল, সেখানে আল্লাহর দেওয়া রিজিক আহার করিবে।
আমরা সকলে আবু আব্দুল্লাহর ঘরে আসিয়া বসিলাম। সে তাহার স্ত্রীকে জবাইকৃত পাখীগুলি রান্না করিতে বলিয়া জীবিত পাখীগুলি লইয়া বাজারে গেল এবং উহা বিক্রয় করিয়া রুটি খরিদ করিয়া আনিল।
আহারের পর বিদায় লইয়া আমরাপুনরায যাত্রা করিলাম। পথে আসিয়া আবু আব্দুল্লাহ সম্পর্কে আমাদের মধ্যে এইরুপ আলোচনা হইল-
আবু আব্দুল্লাহর দৈন্যদশা আমরা স্বচক্ষে দেখিতে আসিলাম। তাহার নেকবখতী ও বুজুর্গী সম্পর্কেও আমরা সকলে অবগত। এদিকে আল্লাহর মেহেরবাণীতে আমরা সকলেই বিত্তবান ইচ্ছা করিলে আমরা কয়েকজনে চাঁদা করিয়া তাহার আর্থিক স্বচ্ছলতা আনায়ন করিতে পারি এইরুপ পরামর্শের পর আমরা যার যার সামর্থ অনুযায়ী চাঁদা প্রদান করিলাম। সকলের সম্মিলিত চাঁদার পরিমাণ হইল পাঁচ হাজার দেরহাম।
অতঃপর আমরা সেই অর্থ আবু আব্দুল্লাহকে দেওয়ার উদ্দেশ্যে পুনরায় তাহার গ্রামের দিকে রওয়ানা হইলাম। পথে বসরার আমীর মোহাম্মদ ইবনে সোলায়মানের বাড়ী অতিক্রমের সময় আমরা দেখিতে পায়লাম , আমীর ঘরের বারান্দায় বসিয়া আছেন। তিনিও আমাদিগকে    ক্রমশ--

Share this :

আমি সাধারণ একজন মানুষ। আমি পছন্দ করি অন্যের কাছ থেকে কিছু শিখতে। আইটি নিয়ে ঘাটাঘাটি করতে ভালো লাগে।

Previous
Next Post »