১২। সুন্নাহর মর্যদা লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
১২। সুন্নাহর মর্যদা লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

তাহাজ্জুদ নামাজের গুরুত্ব, ফজিলত, ওয়াক্ত নিয়ম সহ বিস্তারিত। তাহাজ্জুদ নামাজ

☞ তাহাজ্জুদ নামাযঃ

তাহাজ্জুদের নামায অতীব গুরুত্বপূর্ণ ও ফযিলতপূর্ণ ইবাদত। তাহাজ্জুদ নামায সুন্নাত। নবী করীম (সাঃ) হরহামেশা এ নামায নিয়মিত পড়তেন এবং সাহাবায়ে কেরাম রা. কে তা নিয়মিত আদায় করার জন্য উদ্বুদ্ধ করতেন। পবিত্র কুরআনে তাহাজ্জুদ নামাযের জন্য বিশেষভাবে তাকিদ করা হয়েছে। যেহেতু উম্মতকে নবীর অনুসরণ করার হুকুম করা হয়েছে সে জন্যে তাহাজ্জুদের এ তাকীদ পরোক্ষভাবে গোটা উম্মতের জন্য করা হয়েছে। আল্লাহপাক ইরশাদ করেন- "এবং রাতের কিছু অংশে তাহাজ্জুদের নামায পড়তে থাক। এ নামায তোমার জন্যে আল্লাহর অতিরিক্ত ফযল ও করম। শীঘ্রই আল্লাহ তোমাকে উভয় জগতে বাঞ্ছিত মর্যাদায় ভূষিত করবেন [বণী ইসরাইল :৭৯]










যারা নিয়মিত তাহাজ্জুদের নামায আদায় করে কুরআনে তাদেরকে মুহসেন ও মুত্তাকি নামে অভিহিত করে তাদেরকে আল্লাহর রহমত এবং আখেরাতে চিরন্তন সুখ সম্পদের অধিকারী বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তিনি ইরশাদ করেন- “নিশ্চয়ই মুত্তাকি লোক বাগ-বাগিচায় এবং ঝর্ণার আনন্দ উপভোগ করতে থাকবে এবং যে যে নিয়ামত তাদের প্রভূ তাদেরকে দিতে থাকবেন সেগুলো তারা গ্রহণ করবে। কারণ, নিসন্দেহে তারা এর পূর্বে (দুনিয়ার জীবনে) মুহসেনীন (বড় নেক্কার) ছিল। তারা রাতের খুব অল্প অংশেই ঘুমাতো এবং শেষ রাতে ইস্তেগফার করতো। (কেঁদে কেঁদে আল্লাহর কাছে মাগফেরাত চাইতো)”। [সূরা যারিয়াত:১৫-১৮]
প্রকৃতপক্ষে তাহাজ্জুদ নামায মন ও চরিত্রকে নির্মল ও পবিত্র করার এবং সত্য পথে অবিচল থাকার জন্যে অপরিহার্য ও কার্যকর পন্থা। আল্লাহপাক বলেন- “বস্তুতঃ রাতে ঘুম থেকে উঠা মনকে দমিত করার জন্যে খুব বেশি কার্যকর এবং সে সময়ের কুরআন পাঠ বা যিকির একেবারে যথার্থ”। [সূরা মুয্যাম্মিল-৬]
এসব বান্দাদেরকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা তাঁর প্রিয় বান্দা বলেছেন এবং নেকি ও ঈমানদারির সাক্ষ্য দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন- আল্লাহর প্রিয় বান্দা তারা যারা তাদের প্রতিপালকের দরবারে সিজদা করে এবং দাঁড়িয়ে থেকেই রাত কাটিয়ে দেয়। [সূরা ফুরকান:৬৩-৬৪]


☞ তাহাজ্জুদের গুরুত্ব ও ফযীলতঃ

ফরয নামাজের পর অন্যান্য সুন্নাত ও নফল সব নামাযের মধ্যে তাহাজ্জুদ নামাজের গুরুত্ব ফযীলত সবচেয়ে বেশী (আহমাদ, মেশকাত ১১০ পৃঃ)
রাসুল (সাঃ) বলেন, আমাদের প্রভু পরওয়ারদিগার তাবারাকা ওয়া তা’আলা প্রত্যেক রাত্রে দুনিয়ার আসমানে (যা আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়) নেমে আসেন যখন রাত্রের এক তৃতীয়াংশ বাকী থাকে । অতঃপর তিনি বলেন, তোমাদের কে আমাকে ডাকবে! আমি তার ডাকে সাড়া দেব । কে আমার কাছে কিছু চাইবে আমি তাকে তা দেব, কে আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে আমি তাকে ক্ষমা করে দেব (মুসলিম, মেশকাত ১০৯ পৃঃ)
রাসুল (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি রাত্রে ঘুম থেকে জেগে তাহাজ্জুদের নামায পড়ে এবং সে তার স্ত্রীকেও ঘুম থেকে জাগিয়ে নামায পড়ায় এমনকি সে যদি জেগে না উঠে, তবে তার মুখে খানিকটা পানি ছিটিয়ে দেয় তাহলে তার প্রতি আল্লাহ রহমত বর্ষণ করে থাকেন । অনুরুপ কোন মহিলা যদি রাত্রিকালে জাগ্রত হয়ে তাহাজ্জুদ নামায পড়ে এবং সে তার স্বামীকে নামাযের জন্য জাগায় এমনকি স্বামী না জাগলে স্ত্রী তার মুখে পানি ছিটিয়ে তার ঘুম ভাঙ্গিয়ে দেয় তাহলে তার প্রতিও আল্লাহর রহমত বর্ষিত হতে থাকে (আবু দাউদ, নাসায়ী, মেশকাত ১০৯ পৃঃ)
রাসুল (সাঃ) বলেন, আল্লাহর নিকট অতি প্রিয় নামায দাউদ (আঃ) এর নামায । তিনি অর্ধেক রাত ঘুমাতেন এবং রাতেন তৃতীয় ভাগে নামাযে দাঁড়াতেন আর ৬ষ্ঠ ভাগে আবার ঘুমাতেন (বুখারী, মুসলিম, মেশকাত ১০৯ পৃঃ)

☞ তাহাজ্জুদ নামাযের ওয়াক্তঃ

তাহাজ্জুদের অর্থ হল ঘুম থেকে উঠা। কুরআনে রাতের কিছু অংশে তাহাজ্জুদের যে তাকীদ করা হয়েছে তার মর্ম এই যে, রাতের কিছু অংশ ঘুমিয়ে থাকার পর উঠে নামায পড়া। তাহাজ্জুদের মসনূন সময় এই যে, এশার নামাযের পর লোকেরা ঘুমাবে। তারপর অর্ধেক রাতের পর উঠে নামায পড়বে। নবী (সাঃ) কখনো মধ্য রাতে, কখনো তার কিছু আগে অথবা পরে ঘুম থেকে উঠতেন এবং আসমানের দিকে তাকিয়ে সূরা আলে-ইমরানের শেষ রুকুর কয়েক আয়াত পড়তেন। তারপর মেসওয়াক ও অযু করে নামায পড়তেন।

☞ তাহাজ্জুদ নামাযের সময়ঃ

অর্ধ রাতের পরে। রাতের শেষ তৃতীয়াংশে পড়া উত্তম। তাহাজ্জুদের মুল সময় মুলত রাত ৩টা থেকে শুরু হয়ে ফজরের আযানের আগ পর্যন্ত থাকে। তবে ঘুম থেকে না জাগার সম্ভাবনা থাকলে ইশা সালাতের পর দু রাকআত সুন্নত ও বিতরের আগে তা পড়ে নেয়া জায়েয আছে। তবে পরিপূর্ণ তাহাজ্জুতের মর্যাদা পেতে হলে, এশার নামাযের পর ঘুমিয়ে রাত ২টা বা ৩টার দিকে উঠে নামায আদায় করতে হবে।

☞ তাহাজ্জুদ নামাযের রাকআত সংখ্যাঃ

সর্ব নিম্ন দু রাকআত। আর সর্বোচ্চ ৮ রাকআত পড়া উত্তম। তাহাজ্জুদের ৮ রাকাত নামায আদায় করার পরে, বিতর ৩রাকাত নামায পড়া। রাসুল (সাঃ) তাহাজ্জুদের নামায বেশিরভাগ সময় ৮রাকাত পরতেন এবং এঁর পর বিতরের নামায পরে মোট ১১রাকাত পূর্ণ করতেন।
১। তাহাজ্জুদ নামায বিতরসহ ১৩, ১১, ৯ কিংবা ৭ রাকাত পড়া যায় (বুখারী, মুসলিম, মেশকাত ১০৬ পৃঃ)

২। প্রথমে দু’রাকাত ছোট ছোট সুরা মিলিয়ে হালকাভাবে পড়ে আরম্ভ করবে (মুসলিম, মেশকাত ১০৬ পৃঃ)

৩। অতঃপর দু’রাকাত করে, তাহাজ্জুদের নামায সাত রাকাত পড়তে চাইলে দু’সালামে চার রাকাত পড়ে তিন রাকাত বিতর পড়বে । (বুখারী, মেশকাত ১০৬ পৃঃ)

☞ তাহাজ্জুদ নামাযের আগে করণীয়ঃ

হুযাইফা (রাযিঃ) বলেন, রাসুল (সাঃ) যখন তাহাজ্জুদ পড়তে উঠতেন তখন মিসওয়াক করতেন এবং আমাদেরকেও মিসওয়াক করার হুকুম দেয়া হত, আমরা যখন তাহাজ্জুদ পড়তে উঠতাম, অতঃপর নবী (সাঃ) অযু করতেন (মুসলিম) । তারপর নীচের দু’আ ও তাসবীহগুলি দশবার করে পড়তেন । তারপর নামায শুরু করতেন (আবু দাউদ, মেশকাত ১০৮ পৃঃ)
(১) দশবার “আল্লাহু আকবার (আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ)
(২) দশবার আলহামদুলিল্লাহ (সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্যই)
(৩) দশবার সুব্‌হানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী (আমি আল্লাহ প্রশংসার সাথে তাঁর পবিত্রতা ঘোষনা করছি)
(৪) দশবার সুব্‌হানাল মালিকিল কদ্দুস (আমি মহা পবিত্র মালিকের গুণগান করছি)
(৫) দশবার আসতাগফিরুলাহ (আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা ভিক্ষা করছি)
(৬) দশবার লা ইলাহ ইল্লাল্লাহু (আল্লাহ ছাড়া ইবাদতের যোগ্য আর কেউ নেই)
(৭) দশবার আল্লাহুম্মা ইন্নী আঊযুবিকা মিন দীক্বিদ্দুনিয়া ওয়া দীক্বি ইয়াওমিল ক্বিয়ামাহ (হে আল্লাহ! আমি এই জগতের এবং পরকালের সঙ্কট থেকে তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করছি)

☞ তাহাজ্জুদ পড়ার নিয়মঃ

তাহাজ্জুদ নামায পড়ার জন্য নির্দিষ্ট কোন সুরা নেই। যে কোন সুরা দিয়েই এই নামায আদায় করা যাবে। তবে যদি বড় সুরা বা আয়াত মুখুস্ত থাকে তবে, সেগুলো দিয়ে পড়াই উত্তম। কারন রাসুল (সাঃ) সব সময় বড় বড় সুরা দিয়ে তাহাজ্জুদ নামায আদায় করতেন। তাই আমাদেরও বড় সুরা মুখুস্ত করে, তা দিয়ে তাহাজ্জুত নামাদ আদায় করা উচিৎ।
যাইহোক, বড় সুরা মুখুস্ত না থাকলে যে কোন সুরা দিয়েই নামায আদায় করা যাবে। নিয়ম হল ২রাকাত করে করে, এই নামায আদায় করা। প্রত্যেক রাকাতে সুরা ফাতিহা পড়ার পর, অন্য যে কোন সুরা মিলানো। এভাবেই নামায আদায় করতে হবে।
আল্লাহ, আমাদের সবাইকে তাহাজ্জুদের পরিপূর্ণ মর্যাদা লাভ করার তৌফিক দাণ করুন। আমিন..

SOURCE: COPY PAST

যে ১০টি মুহূর্তে সালাম দেয়া উচিত নয়

এক মুসলমান অন্যজনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলে সালাম দেয়ার বিধান রয়েছে। সালামের মাধ্যমে পরস্পরের জন্য শান্তি ও কল্যাণ কামনা করা হয়। কোনো মুসলমান ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে কথা বলার আগে সালাম দেয়া নবীজির আদর্শ। আর এর উত্তর দেয়া অবশ্যকরণীয়। রাসুল (সা.) সালামের ব্যাপারে বিশেষ তাগিদ দিয়েছেন। হাদিসে কারো সঙ্গে দেখা হলে কথাবার্তার আগে সালাম দেয়ার কথা বলা হয়েছে। আমাদের সমাজে সালাম সৌজন্য বিনিময়ের একটি মাধ্যম। চলতে-ফিরতে, দেখা-সাক্ষাতে যেমন সালাম দিতে হয় তেমনি ফোনে বা মোবাইলে কথা বলার সময়ও সালাম দেয়া সুন্নত। সালাম একটি স্বতন্ত্র ইবাদত ও সওয়াবের উপায়।
তবে এই সালামেরও কিছু নিয়ম ও আদব আছে। সালাম একটি সওয়াবের কাজ হলেও অনেক সময় বিধান না মানার কারণে তা আর সওয়াবের কাজ থাকে না, গোনাহের কাজ হয়ে যায়। 
১০টি মুহূর্ত এমন আছে যখন সালাম দেয়া উচিত নয়। 
১. নামাজ পড়া অবস্থায় কোনো ব্যক্তিকে সালাম দেয়া উচিত নয়। কারণ নামাজের অবস্থায় ওই ব্যক্তি এর উত্তর দিতে পারবেন না। উত্তর দিলে নামাজ ভেঙে যাবে। 
২. কেউ প্রশ্রাব-পায়খানা করছে এমতাবস্থায় তাকে সালাম দেয়া যাবে না। কারণ তখন জবাব দেয়ার কোনো উপায় নেই। সালামও এক ধরনের জিকির। প্রশ্রাব-পায়খানার সময় জিকির করা যাবে না। 
৩. ওজুরত অবস্থায় কাউকে সালাম দেয়া যাবে না। এতে তার ওজুর মনোযোগ নষ্ট হবে; ওজুতে ভুলও হতে পারে। 
৪. কেউ খাবার খাচ্ছে এমতাবস্থায়ও সালাম দেয়া যাবে না। এ সময় সালাম দিতে নিষেধ করা হয়েছে হাদিসে।
৫. কোরআন তেলাওয়াত করা অবস্থায় কোনো ব্যক্তিকে সালাম দেয়া উচিত নয়। 
৬. জিকির ও মোরাকাবারত ব্যক্তিকে সালাম দেয়া উচিত নয়। 
৭. ওয়াজ ও নসিহত শোনা অবস্থায় সালাম দেয়া উচিত নয়। 
৮. দ্বীনি শিক্ষার মজলিসে মশগুল ব্যক্তিকে সালাম দেয়া উচিত নয়। 
৯. আজানরত অবস্থায় মুয়াজ্জিনকে সালাম দেয়া যাবে না। 
১০. কেউ কোনো জরুরি হিসাব-নিকাশে ব্যস্ত তখনও সালাম দেয়া যাবে না। সালামের উত্তর দেয়া যেহেতু ওয়াজিব এজন্য যাকে সালাম দেয়া হচ্ছে তার অবস্থাটি বিশেষ বিবেচনায় রাখাই হচ্ছে সালামের মূল আদব।

দাড়ি রাখার উপকারিতা

দাড়ি রাখার উপকারিতা
আমরা মুসলমান তাই আমাদের কিছু দায়েমী ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নত সহ কিছু বিধিবিধান রয়েছে যা আমাদের অবশ্যই পালন কারতে হবে। অন্যথায় আমরা কখনই সহিহ হতে পরবো না। তেমনী আমাদের দায়েমী সুন্নত হচ্ছে দাড়ি। একটি হাদিসে আছে: হযরত মোহা্ম্মদ (সা:) বলেছেন,  যে দাড়িতে খুর ব্যবহার করল, সে যেন আমার গলায় খুর বসালো।
দাড়ি রাখার উপকারিতা নিম্নে দেওয়া হলো।


) দাড়ি রাখলে আল্লাহ তাঁর রাসূল (সাঃ) খুশি হন!

) দাড়ি রাখা দ্বারা সকল নবীগণের সাদৃশ্য গ্রহণ করা হয়!

) দাড়ি রাখলে নবীজির শাফায়াত লা হবে।

) দাড়ি রাখলে কবরের আযাব মাফ হবে।

) দাড়িওয়ালার প্রতি মানুষের ধারণা ভাল থাকে এবং সে মানুষের দোয়া পায়।

) অপরিচিত স্থানে দাড়িওয়ালা মুসলমান মারা গেলে, মুসলমানকিনা চেনার জন্য উলঙ্গ করে খাতনা দেখতে হয় না।

) দাড়িতে চেহারার সৌন্দর্য্য বাড়ে এবং বীরত্বের পরিচয় বহন করে।

) কিয়ামতের অন্ধকারে মুমিনের দাড়ি নূরে পরিণত হবে।

) ঈমান-আমল ঠিক থাকলে দাড়িওয়ালা ব্যক্তি নবী ওলীর সাথে সাক্ষাৎ হাশর হবে।

১০) দাড়ি রাখলে অনেক পাপ থেকে বেঁচে থাকা যায়।

১১) দাড়ি ইসলামী সভ্যতার অন্যতম প্রতীক।

১২) দাড়ি রাখলে মুনকার- নাকীরের সুওয়াল- জাওয়াব সহজ হয়

১৩) লম্বা দাড়ি স্বাস্থের ক্ষতিকর জীবানু গুলোকে গলা ওসিনাতে পৌঁছতে দেয় না।

১৪) দাড়ি গলাকে শীত গরমের বিরুপ প্রতিক্রিয়া থেকে মুক্ত রাখে।

১৫) দাড়ির অস্তিত্ব যৌন শক্তিকে বৃদ্ধি করে,যা ডাক্তার দ্বারা প্রমাণিত।

১৬) দাড়ি রাখলে পাইরিয়ার মত মারাত্বক রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

১৭) দাড়ি রাখলে সেভ করার অনর্থক সময় অর্থ অপচয় থেকে বাঁচা যায়।

১৮) দাড়ি দ্বারা গুণাহে জারিয়া থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

১৯) দাড়ি রাখার দ্বারা শারীরিক সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি পায়।

২০) দাড়িতে ক্ষুর বা ব্লেড লাগালে, চোখের রগের উপর আঘাত লাগে। ফলে চোখের জ্যোতি কমে যায় এবং মুখের চামড়া শক্ত হয়ে যায়। তাই দাড়ি রাখলে এই ক্ষতি থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়

(বুখারি শরীফ ১৩৫৬, মুসলিম, শরীফ ২২৪২,নাসাইদ ৩৫৪)

আরও জানতে ভিজিট করুন  Islamic World

সুন্নাহর আইনগত মর্যাদা: Islamic World

Islamic World ..................
প্রশ্ন : মুসলমানদের সর্বসম্মত বিশ্বাস হলো, রসূল সা.-এর উপর কুরআন ছাড়াও ওহী নাযিল হতো। সেই ওহীই আমাদের কাছে রসূলের সা. হুকুম ও বাণী হিসেবে বিদ্যমান। কিন্তু আজকাল কেউ কেউ বলছেন, কুরআন ছাড়া আর কোনো ওহী আসতোনা। তাদের সবচেয়ে বড় যুক্তি এই যে, রসূল সা.-এর প্রত্যেকটি কথাই যদি ওহীভিত্তিক হতো, তা হলে তাঁর কোনো কোনো কথায় কুরআনের সমালোচনা করা হয়েছে কেন এবং অন্যদের কথায় তিনি নিজের কোনো কোনো মত পরিবর্তন করেছেন কেন? কোনো কোনো হাদিসে তো এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে। 'মাকামে সুন্নাত' (সুন্নাহর আইনগত মর্যাদা নামক একখানা পুস্তক প্রকাশিত হয়েছে। ঐ পুস্তকে কুরআন ছাড়া আর কোনো ওহী আসতো না- এই মতের পক্ষে বিপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন ও তার তুলনামূলক পর্যালোচনা করে উল্লেখিত যুক্তির পুনরুল্লেখ করা হয়েছে। অধিকন্তু গ্রন্থকার এটিকে একটি অকাট্য যুক্তি হিসেবে পেশ করার পর এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, হাদিসে কুদসী (যে হাদিসে স্বয়ং আল্লাহর উক্তি উদ্ধৃত করা হয়েছে) এবং ভবিষ্যদ্বাণীগুলো ছাড়া অন্যান্য বিষয়ে রসূল সা.-এর কথা ও কাজ ওহী নয়। তাই ওগুলোতে রদবদল চলতে পারে। অনুগ্রহপূর্বক ব্যাখ্যা করুণ যে, ওহীকে কুরআনের মধ্যে এবং নবী জীবনের একটা ক্ষুদ্র অংশে সীমাবদ্ধ মনে করার এই মতবাদ কতখানি সঠিক?

'মাকামে সুন্নাত' নামক বইটির আরো কয়েকটি বিষয় গভীর বিচার বিবেচনার দাবি রাখে। জানিনা আপনি ওটা পড়ে দেখেছেন কিনা। এক জায়গায় তিনি 'হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগা' গ্রন্থের বরাত দিয়ে লিখেছেন বুখারি ও মুসলিম শরিফে এই মর্মে একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে যে, পানির অভাব দেখা দিলে সহবাসজনিত অপবিত্রতা দুরিকরণে তায়াম্মুম গোসলের স্থলাভিষিক্ত হতে পারে কিনা সে ব্যাপারে হযরত ওমর রা. ও হযরত আম্মার রা.-এর মধ্যে আজীবন মতবিরোধ চলছিলো। অথচ কুরআনে দুই জায়গায় স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে এরূপ ক্ষেত্রে তায়াম্মুম করে নাও। এ দ্বারা কি বুঝা যায় যে, উভয় সাহাবি কুরআন সম্পর্কে অজ্ঞ ছিলেন এবং তাঁদেরকে কুরআনের উক্ত বক্তব্য অবহিত করারও কেউ ছিলোনা? অথবা কুরআন সাহাবাদের নিকট চূড়ান্ত দলিল ছিলোনা? আরো আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, হযরত আম্মার তায়াম্মুমের পক্ষে এই বলে যুক্তি প্রদর্শন করতেন যে, রসূল সা.-এর  অনুমতি দিয়েছেন। অথচ তাতেও হযরত ওমর রা. আশ্বস্ত হতে পারেননি। তবে পরবর্তী কালের লোকেরা আশ্বস্ত হয়ে গেছে এবং তাও হয়েছে কুরআন দ্বারা নয় বরং এই হাদিস দ্বারা। কারণ তাদের কাছেও কুরআনের চেয়ে হাদিস অগ্রগণ্য। মোটকথা, এই সর্বসম্মত হাদিসের উপর অনেক লম্বা চওড়া আপত্তি তোলা হয়েছে এবং ইচ্ছেমত উপহাস করা হয়েছে। এতে আমার মন নিদারুণভাবে ক্ষুব্ধ। প্রশ্ন হলো, এ হাদিসটি কি শুদ্ধ? এর তাৎপর্য কি?

জবাব : রিসালতের পদটির মর্যাদা ও সম্মান ক্ষুন্ন করা, রসূলের সুন্নাহর সাথে উম্মাতের সম্পর্ক ছিন্ন করা এবং সুন্নাহর আইনগত মর্যাদাকে জনসাধারণের চোখে সংশয়পূর্ণ ও গুরুত্বহীন করে তোলার দুরভিসন্ধি নিয়ে এ যাবত যে কয়টি মতবাদ রচিত হয়েছে, তার মধ্যে একটি মতবাদ এই যে, রসূল সা.-এর নিকট মাত্র এক ধরনের ওহী নাযিল হয়েছে, যা কুরআনের অন্তর্ভুক্ত। এর বাইরে আর কোনো ওহীর কথা স্বীকার করা ইহুদীদের কুসংস্কার, যার সাথে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই। সুন্নাহর অতীব মহান ও পবিত্র ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করা ছাড়াও এই মতবাদ দ্বারা আরো একটি যুক্তি খাড়া করার চেষ্টা করা হয়ে থাকে। সেটি হলো সুন্নাহ যেহেতু ওহীভিত্তিক নয়, তাই ওটা কেবল রসূল সা.-এর ব্যক্তিগত চিন্তা গবেষণা প্রসূত অভিমত মাত্র। এটি কোনো সর্বজন মান্য আইনের মর্যাদা রাখেনা। বরঞ্চ মুসলমানরা নিজস্ব চিন্তা গবেষণার ভিত্তিতে এর বিপরীত সিদ্ধান্তও নিতে পারে। এটা যে কতদূর ভ্রান্ত মতবাদ, তা বুঝিয়ে বলার অপেক্ষা রাখেনা। কেননা খোদ কুরআন থেকেই প্রমাণিত যা কুরআনের অন্তর্ভুক্ত পঠিত ও লিখিত ওহী ছাড়াও এমন বহু ওহী শুধু মুহাম্মদ সা. নয় বরং আল্লাহর প্রত্যেক নবীর কাছেই নাযিল হতো, যার উপর নিজের আমল করা এবং গোটা উম্মতকে দিয়ে আমল করানো সকল নবীর নবুওয়াতের উদ্দেশ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিলো। সব ওহীকে এরূপ মনে করারও অবকাশ ছিলোনা যে, তা হয়তো মৌমাছির নিকট অবচেতনভাবে বা প্রাকৃতিকভাবে প্রেরিত প্রত্যাদেশের মতো হবে। অথবা আকাশ ও পৃথিবীর নিষ্প্রাণ পদার্থের নিকট অবতীর্ণ প্রাকৃতিক ওহীর মতো হবে। তথাপি হাদিস বিরোধীদের কর্মপন্থা এই যে, যে জিনিস তাদের কাছে ভালে লাগে ও তাদের স্বার্থের অনুকূল হয়, সেটা উদ্ধারের পথে অন্তরায় হয়, তা কুরআনে যে অকাট্য প্রমাণ রয়েছে, এই গোষ্ঠি ভুলেও তার কথা মুখে আনেনা। কিন্তু কুরআন ছাড়া রসূল সা.-এর নিকট আর কোনো ওহী আসতোনা এই মর্মে কোনো যুক্তি প্রমাণ কোথাও পাওয়া যায় কিনা, তার অন্বেষণে তারা হাদিস কুরআন দুটোই চষে ফেলতে ভীষণ তৎপর। এ ধরণের কোনো প্রমাণ উদ্ধার করা তো তাদের পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠেনি। তবে কুরআন ও হাদিসে এরূপ মুষ্ঠিমেয় কয়েকটি ঘটনা তাদের হস্তগত হয়েছে।, যা দ্বারা বুঝা যায় যে, রসূল সা.-এর কোনো কাজে ওহী দ্বারা সাবধান করা হয়েছে, অথবা রসূল সা. কারো পরামর্শে নিজের মত পরিবর্তন করেছেন। আর এইটুকু মাল-মশলা হাতে পেয়েই তা দিয়ে তারা নিজেদের মনগড়া মতবাদের সপক্ষে যুক্তিতর্কের এক বিরাট প্রাসাদ গড়ে তুলেছে।

এই যুক্তিতর্ক নিয়ে যদি সামান্যতম চিন্তাভাবনাও করা হয়, তা হলে পরিষ্কার বুঝা যাবে যে, এতে যে ঘটনাগুলোকে যুক্তি হিসেবে দাঁড় করানো হয়েছে, তা দ্বারা কু্রআন বহির্ভুত ওহীর অস্তিত্ব অস্বীকারকারীদের বক্তব্য যেমন প্রতিষ্ঠিত হয়না, তেমনি তা দ্বারা সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনগণের দাবিও অসত্য প্রমাণিত হয়না। অস্বীকারকারীদের বক্তব্য হলে রসূল সা.-এর উপর কুরআন ব্যতীত আর কোনো ওহী কোনো ব্যাপারেই নাযিল হয়নি। উল্লেখিত ঘটনাবলী দ্বারা শুধু এতোটুকুই প্রমাণিত হয় যে, কিছু কিছু ব্যাপারে এমনও রয়েছে যাতে ওহী অবতীর্ণ হয়নি কিংবা যাতে ওহী অবতীর্ণ হওয়ার কিছুটা বিরতি ঘটেছিলো। অস্বীকারকারীদের বক্তব্যের যথার্থতা প্রমাণের জন্য এটা যথেষ্ট নয়। পক্ষান্তরে সাধারণ মুসলিম জনতার বক্তব্য ও বিশ্বাস হলো, রসূল সা.-এর কথা ও কাজ হয় অবিকল ওহীভিত্তিক, নতুবা ওহীর নির্দেশে সম্পাদিত হয়েছে। তাই তা আল্লাহর ইচ্ছে ও সন্তোষের সর্বোত্তম প্রতীক। আর যদি কোনো কাজ ওহীর নির্দেশিত পথ থেকে সামান্য পরিমাণেও সরে গিয়ে থাকে, তবে ওহীর মাধ্যমেই তৎক্ষনাৎ তা শুধরে দেয়া হয়েছে। কুরআন ও সুন্নাহ থেকে নবীদের নিষ্প্রাণ হওয়ার যে তত্ত্ব প্রমাণিত তা এটাই। কেবল গুটিকয়েক ঘটনা ও কার্যকলাপ ছাড়া বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ ঘটনা ও কার্যকলাপ এমনি ধরনের যে, তাতে রসূল সা.-এর কর্মপদ্ধতি হয় হুবুহু ওহীভিত্তিক, নচেত তা ওহীর দাবি ও আল্লাহর ইচ্ছেকে এমন নিখুঁতভাবে ও ইপ্সিত মানে পূর্ণ করতো যে, তাতে আর ওহীর মাধ্যমে সংশোধনের প্রয়োজনই থাকতোনা। সে ক্ষেত্রে ওহীর নিরবতা বা নাযিল না হওয়াটাও মূলত সম্মতি ও অনুমোদনেরই পর্যায়ভুক্ত। অন্যথায় যে নবীর উপর ওহীর এমন কঠোর তদারকী বিরাজ করতো যে, তিনি শুধু ঠোঁট নাড়লেই ------------------ (তুমি জিভ নেড়ো না) বলে সতর্ক করে দেয়া হতো, এবং যিনি একটু বিরক্তি প্রকাশ করলেই সূরা নাযিল হয়ে যেতো, সেই নবী নবুওয়াতের দায়িত্ব পালনে আল্লাহর সন্তুষ্টি চুল পরিমাণ লংঘন করবেন অথচ ওহী এসে তৎক্ষণাৎ তাঁকে শুধরে দেবেন না, এটা কিভাবে কল্পনা করা যেতে পারে? কাজেই গুটিকয়েক ঘটনাকে বেছে বেছে দেখালেই আমাদের এ বক্তব্য খণ্ডিত হয়না যে, মোটামুটিভাবে এবং সামগ্রিকভাবে গোটা নবী জীবন ওহীর পথনির্দেশনার উপর প্রতিষ্ঠিত। বরঞ্চ সতর্কীকরণ ও সংশোধনের উদ্দেশ্যে ওহী নাযিল হওয়ার মাত্র গুটিকয় ঘটনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকা আমাদের বক্তব্যকে আরো মজবুত করে।

বিরোধী পক্ষ এখানে এই বলে আপত্তি জানাতে পারে যে, রসূল সা.-এর নির্মল জীবন ও মহৎ চরিত্রের অধিকাংশ ওহীভিত্তিক বলে সাধারণ মুসলমানগণ বিশ্বাস পোষণ করে এ কথা ঠিক নয়। কেননা তাদের অনেকেই মনে করে রসূলের প্রতিটি তৎপরতাই ওহী। এ দাবির সপক্ষে তারা -------------------------------------------- (তিনি মনগড়াভাবে কোনো কথাই বলেন না। তিনি যাই বলেন তা ওহী ছাড়া আর কিছু নয়।) এই আয়াতকে প্রমাণ হিসেবে পেশ করে থাকে। আমি এর জবাবে বলতে চাই, আসলে এই দু'টো বক্তব্যের মধ্যে কোনো বৈপরিত্য নেই নবুওয়াতের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে রসূল সা.-এর পক্ষ থেকে যে হাজারো কথা, কাজ, আদেশ ও নিষেধ জারি হয়েছে তার মধ্যে অতি নগণ্য ও বিরল সংখ্যকই এমন রয়েছে, যা ওহীভিত্তিক নয়। এগুলো সংখ্যায় এতো অল্প যে তা হিসেবে ধরার মতোই নয় এবং তাতে -------------------------------- "তিনি যাই বলেন তা ওহী ছাড়া কিছু নয়" উক্তিটি থেকে যে মূলনীতি উদ্ভাবন করা হয়েছে, (অর্থাৎ রসূলের জীবন ও কর্ম সামগ্রিকভাবে ওহীভিত্তিক) তাতে কোনো ব্যাঘাত ঘটেনা। যে বক্তব্য শতকরা ৯৯ বা তার চেয়েও বেশি অংশের ব্যাপারে সঠিক ও প্রযোজ্য, তাকে যদি মূলনীতির আকারে বর্ণনা করা হয়, তবে এই বচনভঙ্গিটি মোটেই অসত্য এ অশুদ্ধ নয়। সামগ্রিক সিদ্ধান্ত ঘোষণার বেলায় অধিকাংশের বা সংখ্যাগরিষ্ঠের অবস্থাটাই সব সময় প্রধান বিবেচ্য বিষয় হয়ে থাকে। এ সত্যটাই একটি ইংরেজি প্রবাদে এই বলে ব্যক্ত করা হয়েছে যে, কিছু কিছু ব্যতিক্রমি ব্যাপার এমন হয়ে থাকে যে, তাতে সংশিষ্ট মূলনীতির খণ্ডন তো হয়ই না, অধিকন্তু তা আরো সংহত অকাট্য হয়।

"There are some exceptions which prove the Rule."

যাহোক, প্রকৃত ব্যাপার হলো, কুরআন ছাড়াও রসূল সা.-এর উপর বহু ওহী অবতীর্ন হয়েছে। আর সেসব ক্ষেত্রে ওহী আসেনি, অথচ ব্যাপারটি রিসালাত বা নবুওয়াতের দায়িত্বের সাথে সংশিষ্ট, সে ক্ষেত্রে ওহী নাযিল না হওয়াটাই প্রমাণ করে যে, ঘটনা ও কার্যকলাপ যাই ঘটে থাকুক না কেন, হুবুহু আল্লাহর ইচ্ছে ও সম্মতি অনুযায়ীই সংঘটিত হয়েছে। অবশ্য পালনীয় ও অবশ্য কর্তব্য হবার ব্যাপারে ওহীভিত্তিক নির্দেশের সাথে তার কোনোই পার্থক্য নেই। সুতরাং সেইসব ক্ষেত্রে কোনো মুসলমানেরাই নবীর হুকুমের আনুগত্য পরিত্যাগ করার জন্য এই ওজুহাত দাঁড় করানো বৈধ নয় যে, নবীর কোনো বিশেষ নির্দেশ ওহীভিত্তিক নয় বা তা ওহীভিত্তিক হবার কোনো প্রমাণ সে পায়নি।

এবার 'এদারায়ে সাকাফাতে ইসলামিয়া' কর্তৃক প্রকাশিত 'মাকামে সুন্নাত' নামক গ্রন্থটির প্রসঙ্গে আসা যাক। এ বই আমিও পড়ে ফেলেছি। বইটা পড়লে মনে হয়, লেখক 'মানিও না অমান্যও করি না' ধরনের নীতির অনুসারী। প্রথমে তো তিনি স্বকল্পিতভাবে হাদিসপন্থী ও হাদিস বিরোধীদের শিবির থেকে সরে গিয়ে উভয় শিবির থেকে সম দূরত্বে অবস্থিত সত্যাশ্রয়ী তৃতীয় পক্ষ হিসেবে নিজের একটি আলাদা শিবির স্থাপন করেছেন। কিন্তু পাঠক যখন বইটি অধ্যয়ন করতে করতে ক্রমশ সামনে অগ্রসর হয়, তখন দেখা যায়, তিনি হদিস বিরোধীদের শিবিরের দিকে ঘনিষ্ঠতর হতে যাচ্ছেন। এমনকি কোথাও কোথাও আমাদের মতো হাদিসপন্থীদের দৃষ্টিতে এমনও মনে হয় যে, লেখকের সাথে হাদিস বিরোধীদের অতি সামান্যই দূরত্ব বজায় রয়েছে। আবার কোথাও কোথাও তাকে হাদিস বিরোধীদের অস্ত্র ধার করে হাদিসপন্থীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতেও দেখা যায়। তার যে উক্তিগুলোর আপনি উদ্ধৃতি দিয়েছেন তাতেই দেখা যায়, তিনি সূচনা করেছেন এই বলে যে, রসূল সা.-এর সকল কার্যকলাপ ও কথাবার্তা ওহীর সাথে সামঞ্জস্যশীল, কিন্তু অবিকল ওহী নয়। তবে তার অল্প কিছু অংশ ইল্‌হাম। (অবচেতনভাবে অন্তরে আবির্ভূত ঐশী আভাস ইঙ্গিত, ধ্যান-ধারণা বা প্রজ্ঞা, যা নবীদের বেলায় ওহীর পর্যায়ভুক্ত-অনুবাদক) কিন্তু আলোচনার সমাপ্তি টানেন এই বলে যে, বড়জোর দু'তিনটি ক্ষেত্রে রসূলের হাদিসের ইল্‌হামভিত্তিক বলে মেনে নেয়া যেতে পারে। তবে যেহেতু প্রেক্ষাপটটি পরিবর্তনশীল, তাই নবীর আমলের অনেক ব্যাপার অন্য যুগে রদবদলের যোগ্যও হতে পারে।

বুখারি ও মুসলিম শরিফের তায়াম্মুম সংক্রান্ত হাদিস প্রসঙ্গে যে বক্তব্য বিশ্লেষণ বইটিতে লিপিবদ্ধ হয়েছে তাও পড়ে দেখার সুযোগ পেয়েছি। আমি নিদারুণভাবে বিস্মিত ও বেদনাহত হয়েছি এই ভেবে যে লেখক নিজে বিভ্রান্তির শিকার হয়েছেন হোন, তা বলে অন্যকেও বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হলেন কেন, আর কিছুমাত্র চিন্তাভাবনা ও বিচারবিবেচনা ছাড়াই সাহাবা ও হাদিসবেত্তাগণ সমেত সকল আধুনিক ও প্রাচীন মনীষীকে উপহাস ও ব্যঙ্গ বিদ্রুপ করার ঔদ্ধত্য কিভাবে দেখালেন?

এ বিষয়ে প্রকৃত তথ্য হলো, গোসল ও তায়াম্মুম সংক্রান্ত আলোচনা কুরআনে দু'জায়গায় এসেছে। একটি সূরা আন নেসায়, অপরটি সূরা মায়েদায়। যথা :
---------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
"হে ঈমানদারগণ! নেশাগ্রস্ত অবস্থায় নামাযের ধারে কাছে যেয়ো না, যতোক্ষণ না মুখে কি বলছো টের পাও। প্রবাসে থাকা অবস্থায় ছাড়া বীর্যপাতজনিত অপবিত্রতা নিয়েও নামাযের কাছে যেয়ো না যতোক্ষণ না গোসল করে নাও। তবে আমরা রুগ্ন ও সফররত থাকলে কিংবা পেশাব পায়খানা ও স্ত্রীর সাথে মেলামেশা করার পর পানি না পেলে তায়াম্মুম করে নিও।" [সূরা আন নিসা, আয়াত : ৪৩]
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
"আর যদি তোমরা বীর্যপাতজনিত কারণে অপবিত্র হয়ে থাক তবে পবিত্র হয়ে নাও। যদি রুগ্ন কিংবা সফররত থাক, অথবা যদি তোমাদের কেউ পেশাব পায়খানা কিংবা স্ত্রীর সাথে মেলামেশা করার পর পানি না পায়, তাহলে তায়াম্মুম করে নাও।" [সূরা আল মায়দা, আয়াত : ০৬]

উভয় স্থানে যেখানে, প্রথমে 'জুনুবান' (বীর্যপাতজনিত অপবিত্রাবস্থার) উল্লেখ রয়েছে সেখানে 'গোসল কর' বা 'পবিত্র হওয়া'র নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পরবর্তীকালে যেখানে পানি না পাওয়া যায়, সেখানে তায়াম্মুমের অনুমতি দেয়া হয়েছে, সেখানে ---------- (স্ত্রীর সাথে মেলামেশার) শব্দটি উল্লেখিত হয়েছে। এ শব্দটি যদিও প্রতীকী অর্থে সঙ্গম বুঝাতে ব্যবহৃত হতে পারে, তবে এর প্রত্যক্ষ অর্থ তা নয়। 'লাম্‌স' শব্দের আসল অর্থ যে 'স্পর্শ করা' তা অস্বীকার করা সম্ভব নয়। তাই এ আয়াতের মর্ম ও তাৎপর্য নিরূপণে সাহাবা, তাবেঈন ও মুজতাহিদ ইমামদের মধ্যে মতভেদ হয়েছে।------------- এর অর্থ কারো মতে স্ত্রীদেরকে নিছক স্পর্শ করা, কারো মতে কামভাব সহকারে স্পর্শ করা আবার কারো মতে সঙ্গম। সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে হযরত ওমর, হযরত ইবনে ওমর, হযরত ইবনে আব্বাস এবং হযরত ইবনে মাসউদের মতে এ আয়াতে সঙ্গম নয় শুধু স্পর্শ করার কথা বলা হয়েছে। এই মত গ্রহণ করেছেন ইমাম শাফেয়ী, ইমাম মালেক, ইমাম জুহরী, ইমাম নাখয়ী এবং আরো কয়েকজন ইমাম। পক্ষান্তরে হযরত আলী এবং আরো কয়েকজন সাহাবির মতে এখানে স্পর্শ দ্বারা সঙ্গমই বুঝানো হয়েছে। ইমাম আবু হানিফা ও অন্য কয়েকজন ফেকাহবিদ এই মতের অনুসারী। এখন আয়াতটিতে দু'রকম অর্থেরই অবকাশ যখন রয়েছে, তখন হযরত ওমর ও অন্য কতিপয় সাহাবি ---------- শব্দটিকে সঙ্গম অর্থে গ্রহণ না করলে তাদেরকে এ আয়াতের ভিত্তিতে দোষারোপ করা যায় কিভাবে? তারা যদি মনে করেন, এ আয়াত থেকে সঙ্গমজনিত অপবিত্রতা দূর করার জন্য তায়াম্মুমের বৈধতা প্রমাণিত হয়না, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কুরআনের বিরুদ্ধাচরণ বা কুরআন সম্পর্কে অজ্ঞতার মতো ভয়ংকর অভিযোগ আরোপ করা কিভাবে সমীচীন হয়? অনুরূপভাবে যে মনীষীগণ এই মতের অনুসারি, তাদের কাছে সঙ্গমজনিত অপবিত্রতা দূর করতে তায়াম্মুম জায়েয- এই মর্মে কোনো হাদিস যদি না পৌঁছে থাকে কিংবা  তারা তেমন কোনো হাদিসকে গ্রহণযোগ্য মনে না করে থাকেন, তাহলে সেজন্য তাদেরকে দোষারোপ করাই বা হবে কেন?

হযরত ওমরের উপর যেহেতু হযরত আম্মারের বর্ণিত হাদিস অগ্রাহ্য করার অভিযোগ তোলা হয়েছে, তাই এ হাদিসটির বিশদ বিবরণ দিচ্ছি।

আসল ব্যাপার হলো, সফরে থাকা অবস্থায় হযরত আম্মারের যখন গোসলের প্রয়োজন দেখা দিলো এবং পানি না পাওয়ায় কি করা যায় তা জিজ্ঞেস করলে রসূল সা. তাঁকে বললেন যে, তায়াম্মুম করলেই চলবে, কিন্তু হযরত ওমর এই সমগ্র ঘটনা ভুলে যান। এমনকি পরে হযরত আম্মার তাঁকে মনে করিয়ে দেয়া সত্ত্বেও তাঁর মনে পড়েনি। এখন বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, হযরত আম্মার যখন হযরত ওমরকে বললেন যে, এ ঘটনা আপনার সামনেই ঘটেছিলো, তখন হযরত ওমর হয়তো আরো অবাক হয়েছেন এবং ভেবেছেন যে, যে ঘটনায় তিনি নিজেও উপস্থিত ছিলেন, তা যদি হযরত আম্মারের মনে থেকে থাকে, তাহলে তিনি ভুলে যেতে পারলেন কিভাবে? সম্ভবত, এজন্যই তিনি হযরত আম্মারের কথা মেনে নিতে ইতস্তত করেছেন এবং নিজের এই মতে অটল থেকেছেন যে, তায়াম্মুম দ্বারা গোসলের কাজ হয়না এবং বীর্যপাতজনিত অপবিত্রতা থেকে গোসল ছাড়া পবিত্র হওয়া যায়না।

প্রশ্ন উঠতে পারে, হযরত ওমর যে হাদিস গ্রহণ করেননি তা অন্যেরা কিভাবে গ্রহণ করলো! এর দুটো জবাব রয়েছে। প্রথমত: হযরত ওমর স্বভাবতই মনে করে থাকতে পারেন যে, একই ঘটনাকে তিনি নিজে ভুলে যাবেন অথচ আম্মার ভুলবেননা, তা হতে পারেনা। কিন্তু হযরত আম্মারের বর্ণনাকে মেনে নেয়ার ব্যাপারে হযরত ওমরের সামনে যেসব মনস্তাত্ত্বিক বাঁধা ছিলো, অন্যদের সামনে তা থাকার কথা নয়। দ্বিতীয় জবাব এই যে, পানি না পাওয়া গেলে যে গোসলের পরিবর্তে তায়াম্মুম করা চলে সে মর্মে রসূল সা.-এর অনুমতি অন্য কয়েকজন সাহাবি থেকেও বর্ণিত হয়েছে। (উদাহরণস্বরূপ, বুখারি ও মুসলিম শরিফেই হযরত ইমরানের হাদিস দ্রষ্টব্য)। সুতরাং এটা অস্বাভাবিক নয় যে, হাদিসবেত্তাগণ যখন এ বিষয়ে বিভিন্ন সনদের হাদিস সংগ্রহ করেছেন, তখন তাদের দৃঢ় বিশ্বাস জন্মেছে যে, এ ব্যাপারে হযরত ওমর হয়তো মানসিক দুর্বলতাবশত বিস্মৃতির শিকার হয়েছেন। আসলে হযরত আম্মার ও অন্যান্য সাহাবির বর্ণনাই সঠিক।

পরিতাপের বিষয়, বুখারি ও মুসলিমের উল্লেখিত হাদিসের বিরুদ্ধে এতো সব আপত্তি উত্থাপন ও এমন আজগুবি ও উদ্ভট তত্ত্ব উদ্ভাবনের আগে কুরআনের সংশ্লিষ্ট আয়াতের শব্দগুলোর প্রতি যেমন খেয়াল করা হয়নি, তেমনি তাফসির, হাদিস ও ফেকাহর গ্রন্থাবলীতে এ বিষয়ের যে বিস্তৃত বিবরণ রয়েছে, তা পড়ে দেখার কষ্টটুকুও স্বীকার করা হয়নি। কেবল 'হুজ্জাতুল্লাহ' গ্রন্থের একটি উক্তি দেখেই লেখক টিটকারি উপহাস ও ব্যাঙ্গ বিদ্রুপের উদ্যম উচ্ছ্বাসে মেতে উঠেছেন এবং হযরত ওমর থেকে শুরু করে শাহ ওয়ালিউল্লাহ পর্যন্ত সকলেরই সমালোচনায় সোচ্চার হয়েছেন। কিন্তু ভাব দেখে মনে হয় তিনি হুজ্জাতুল্লাহ গ্রন্থখানিও পুরোপুরি পড়ে দেখেননি। নচেত এই গ্রন্থেই বলা হয়েছে যে, --------- এর অর্থ ও মর্ম নিয়ে মতভেদ রয়েছে। এই গ্রন্থে একথাও বলা হয়েছে যে, এ আয়াত হযরত ওমরের অজানা ছিলো না। বরং তিনি এর শাব্দিক অর্থের উপরই নির্ভর করেছেন। হুজ্জাতুল্লাহ প্রথম খণ্ডের তায়াম্মুম সংক্রান্ত অধ্যায়ে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে :
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
"হযরত ওমর ও হযরত ইবনে মাসউদ রা. বীর্যপাতজনিত অপবিত্রতা থেকে পবিত্র হবার জন্য তায়াম্মুমকে যথেষ্ট মনে করতেন না। তারা এ সংক্রান্ত আয়াতের --------- শব্দটিকে নিছক স্পর্শ অর্থেই গ্রহণ করতেন। তবে এ দ্বারা তারা নারীকে স্পর্শ করতেই ওজু ভেঙ্গে যায় মনে করতেন।"

ভাবতে অবাক লাগে, ইসলামি বিধান সংক্রান্ত জ্ঞান অর্জন ও তত্ত্বানুসন্ধানের দায়িত্ব পালনে যারা এমন দু:খজনক শৈথিল্যে আক্রান্ত, তারা আবার 'সুন্নাহর আইনগত মর্যাদা' নিরূপণের কাজেও আত্মনিয়োগ করে। [তরজমানুল কুরআন, জানুয়ারি ১৯৫৯]